কেশবপুরে ব্যস্ত সময় পার করছে খেজুর গাছিরা

উত্তম কুমার


যশোরের কেশবপুরে খেজুরের রস তৈরীতে ব্যাস্থ সময় পার করছে খেজুর গাছিরা, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি খেজুর গুড় উৎপাদন হয় যশোরের কেশবপুরে,শীতের আগমনী বার্তায় কয়েক দিনের মধ্যে কেশবপুর উপজেলা প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে শুরু হবে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ, আমন ধানের চাউলের গুড়া দিয়ে তৈরি হবে রসের পিঠা।
খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হবে গুড়-পাটালি,এতে মাতোয়ারা হয়ে গুড় তৈরীতে উৎসবে মেতে উঠবে খেজুর গাছিরা। তাই শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাতে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুর রস সংগ্রহের কাজে ।

কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা যেমন বরনডালি,ত্রিমোহনী,হাসানপুর, প্রতাপপুর, দেউলী, বাগদা, মজিদপুর, বাশবাড়িয়া, সহ বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে এমনকি পতিত জমিতে জন্ম নেওয়া খেজুর গাছ তুলতে ব্যস্ত গাছিরা।
এছাড়া দিনে তাপমাত্রা এখনও বেশি হলেও সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত দেখা মিলছে ঘন কুয়াশা আর মৃদু শীত। কুয়াশা আর মৃদু শীতই জানান দিচ্ছে অচিরেই জেকে বসবে ঠান্ডা-শীত আর দেখা মিলবে রস গুড় ও পাটালির।
গ্রামের মাঠে খেজুর গাছ তুলতে ব্যস্ত গাছি আব্দুর রব, এসময় তিনি বলেন,ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের ডেগো ছাটাই করা তারপর এক সপ্তাহ অপেক্ষা। এরপর আবার ধারালো দা দিয়ে সোনালী অংশ বের করা হয়,যাকে আমরা গ্রামের ভাষায় বলি চাচ দেওয়া।
আর চাচ দেওয়ার এক সপ্তাহ পরে বাঁশের তৈরী নলি বসিয়ে মাটির তৈরি ভাড় বা হাড়ি পেতে শুরু হবে সুস্বাদু খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ।

প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশার চাদর জানান দিচ্ছে শীতের আগমনি বার্তা।
এই মৌসুমে খেজুরের রস দিয়ে কেশবপুরের গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে শীতের আমেজ। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ তত বাড়বে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের রস,গুড় ওতো- প্রোতভাবে জড়িত। এখান কার কারিগরদের দানা গুড় পাটালি গুড় তৈরিতে ব্যাপক সুনাম থাকায় খেজুরের গুড় পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশে ও দেশের বাহিরে।

খেজুরের রস,গুড় এবং পাটালি কেশবপুরের গৌরব ও ঐতিহ্য বহন করছে। এই মৌসুমে শীতের সকালে গাছীরা গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে প্রতি মোড়ে মোড়ে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে যাদের বাড়িতে রস নাই সেই রস নিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটায়। এই ভাবে চলে আসছে বছরের পর বছর। দেখা গেছে কেশবপুরে ৩৫-৪০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রতিবছরই খেজুর গাছের চারা ও বীজ রোপণ করা হচ্ছে এবং স্থানীয় কৃষকদের-কে খেজুর গাছের চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

তবে এসব গাছ ধরে রাখতে হলে ইটভাটায় খেজুরগাছ পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। কয়েকজন চাষি জানিয়েছেন,খেজুর গাছ অন্যান্য গাছের মত বপন করা বা সার কীটনাশক দিতে হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মে পড়ে থাকা খেজুরের আঠি (বিচি) থেকে চারা জন্মায়। তবে সম্প্রতি খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে নতুন করে খেজুর গাছ রোপণের আগ্রহ বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *