ইসরায়েল জুড়ে ভয়াবহ দাবানলঃ ” তীব্র আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ছে ইসরায়েল “- এযেন প্রকৃতি ও পরিবেশের নীরব প্রতিশোধ?

গোয়েন্দা ডেস্ক

যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, সেই ইসরায়েল আজ জ্বলছে ভয়াবহ দাবানলে তীব্র আগুনের লেলিহান শিখায়, কোনক্রমেই নেভানো যাচ্ছেনা এই প্রাকৃতিক দাবানলের আগুন। ইজরায়েলের সমস্ত আধুনিক আগুন নিভানোর নির্বাপন ব্যবস্থা সমূহ সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর এবং ব্যর্থতায় পরিণত হচ্ছে!
দাবানলের তীব্র আগুনের ভয়ংকর রূপের লেলিহান শিখার কাছে বর্বর-নৃশংসতাকারী ইসরাইল আজ একপ্রকার অসহায়!
গত কয়েকদিনে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া তীব্র দাবানলে শহর থেকে শহর গ্রাস হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আগুনের লেলিহান শিখা আকাশেও কালো ধোঁয়ার মেঘ তৈরি করেছে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই দাবানলকে ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের নির্বিচার হামলার ফল হিসেবে দেখছেন, আখ্যায়িত করছেন ‘প্রকৃতির নীরব প্রতিশোধ’ হিসেবে।
গত কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল পবিত্র জেরুজালেম সহ ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে গত ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা ও রাফায় চালানো নৃশংসতম সামরিক আক্রমণ অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রতিনিয়ত কেঁপে উঠেছে ফিলিস্তিনের এই দুটি অঞ্চল। ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বহু অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু।
বিশ্বজুড়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলেও কার্যত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কোটি কোটি মুসলিম নর-নারী এই পরিস্থিতিতে অসহায়ভাবে আল্লাহর কাছে ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রার্থনা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা অনেককেই হতবাক করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দাবানলের তীব্রতা এতটাই বেশি যে বহু শহর জনশূন্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঘরবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কৃষিজমি—সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। যদিও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে দাবানলের ব্যাপকতা তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে এই দাবানলের ঘটনাকে ফিলিস্তিনের মানুষের দীর্ঘদিনের আহাজারির ফল হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে ফিলিস্তিনিরা যে সীমাহীন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা (Sufrimiento) ভোগ করছেন, তারই যেন একটি নীরব প্রতিঘাত এই দাবানল। দীর্ঘদিনের অন্যায় ও অবিচারের পর প্রকৃতি যেন তার নিজস্ব উপায়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে।
তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবানলের কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি। প্রাথমিকভাবে আবহাওয়ার শুষ্কতা ও উচ্চ তাপমাত্রাকে এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে এই সময়ের দাবানলের ব্যাপকতা এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অনেক প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে আবারও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। একদিকে গাজায় অব্যাহত ধ্বংসলীলা, অন্যদিকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এই দুটি ঘটনা একইসঙ্গে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা হয়তো দীর্ঘদিনের সংঘাতের একটি নতুন মোড়।
তবে এই দাবানল প্রকৃতির প্রতিশোধ হোক বা নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এর ফলে ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ যে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঘরহারা মানুষ, পুড়ে যাওয়া সম্পদ—সব মিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিভাবে সাড়া দেয় এবং এই ঘটনা দীর্ঘদিনের সংঘাতের উপর কোনো প্রভাব ফেলে কিনা, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালার ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে অনেকেই একটি চিরায়ত সত্য উক্তি উদ্ধৃত করছেন, “আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেন না।” ইসরায়েলের এই দাবানল সেই ন্যায়বিচারের একটি জ্বলন্ত প্রমাণ কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে। তবে এই মুহূর্তে ইসরায়েলের বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ফিলিস্তিনের উপর চলমান আগ্রাসন বন্ধের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *