
মোঃ মকবুলার রহমান
স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র সংগঠনটি অভিযোগ করে, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী এবং সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) ড. রিয়াদ চৌধুরী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী। তারা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও নওফেলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এখনো এনসিটিবিতে ফ্যাসিবাদী চর্চা অব্যাহত রয়েছে।
ছাত্রদল মনে করে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এনসিটিবি থেকে এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিদের দ্রুত অপসারণ করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়, যা দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে সুপ্রতিষ্ঠিত। অথচ এনসিটিবি সেই ইতিহাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিকভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আগামী প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস ও গণতন্ত্রের সংগ্রামের গুরুত্ব বোঝাতে হলে পাঠ্যপুস্তকে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। এনসিটিবির বর্তমান নীতিনির্ধারকেরা এই গুরুদায়িত্ব পালনে উদাসীন এবং ফ্যাসিবাদের চেতনা লালন করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এনসিটিবির সদিচ্ছার অভাবের কারণে এখনো পাঠ্যক্রমে বীর শহীদদের আত্মত্যাগের সঠিক চিত্র উপস্থাপন করা হয়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা উচিত ছিল, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের স্পষ্ট গাফিলতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জানা গেছে, এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান ২৫ মার্চ তার শেষ কর্মদিবস পালন করেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন চোখের চিকিৎসার অজুহাতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৭ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১৮ দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে তার চিকিৎসার জন্য, যদিও এ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, রবিউল কবির চৌধুরী গত ১৫ বছরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও দীপু মনির ছত্রছায়ায় শতাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন এবং বাংলাদেশের মাধ্যমিক পরীক্ষার কাঠামো বদলে দেওয়ার মূল কারিগর ছিলেন। আন্দোলনকালীন সময়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাকে এনসিটিবিতে আনেন। বর্তমানে পাঠ্যপুস্তক মাফিয়াচক্র তাকে স্থায়ী চেয়ারম্যান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, রবিউল কবিরের যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব রয়েছে এবং তার স্ত্রী ও সন্তানও সেখানে বসবাস করেন। চোখের চিকিৎসার নামে ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান, ভুয়া চিকিৎসা সনদ সংগ্রহসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ এনসিটিবির অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। এ কারণে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার থেকে তার বরখাস্তের দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
