শেষ পর্যন্ত, শেষ রক্ষা হলো না আওয়ামী লীগের, শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হলো আবারও আওয়ামী লীগ।

মোঃ রুহুল আমিন, স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ জেলা

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালে “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ” হিসেবে। পরে ১৯৫৫ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “আওয়ামী লীগ”।

প্রতিষ্ঠার এক দশক পেরোনোর আগেই দলটির ওপর প্রথম বড় ধাক্কা আসে ১৯৫৮ সালে, যখন পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়।

আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত, ‘দ্য আওয়ামী লীগ, সেভেন্টি ইয়ার্স আফটার ১৯৪৯’ শীর্ষক নিবন্ধে দলটির ওপর ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের প্রভাব ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

সেখানকার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়। পরে ২৭শে অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পুরোপুরি সেনা শাসনের মাধ্যমে দেশ চালাতে শুরু করেন।

সে সময় সামরিক আইনের অধীনে একটি অধ্যাদেশ (Political Parties Elected Bodies Disqualified Ordinance -PRODO) জারি করে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন আইয়ুব খান, যার আওতায় আওয়ামী লীগও পড়ে।

সে সময় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও সভা-সমাবেশ কঠোরভাবে দমন করায় দলটি অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলো।

সেইসাথে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, যেমন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তাদের আটক ও নজারদারির মধ্যে রাখা হয়।

ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ পুনরায় সংগঠিত হয়।ছবির উৎস,Bangabandhu Foundation
ছবির ক্যাপশান,ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ পুনরায় সংগঠিত হয়।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন-এ প্রকাশিত, ‘ফ্রম মার্শাল ল টু ডেমোক্রেসি: পাকিস্তান লং হিস্ট্রি অফ ব্যানিং পলিটিকাল পার্টিস’ নিবন্ধে এই নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।

তবে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে, আওয়ামী লীগ পুনরায় সংগঠিত হয় এবং রাজনীতির মূলধারায় ফিরে আসে বলে জানান রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ।

আইয়ুব খানের শাসনামলে ১৯৬২ সালে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, যা “বেসিক ডেমোক্রেসি” নামে পরিচিত ছিলো।

এই সংবিধানে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা হয়, যার ফলে সীমিত পরিসরে হলেও রাজনৈতিক দলগুলো পুনর্গঠনের সুযোগ পায় বলে জানান মি. আহমেদ।

পরে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদসহ তরুণ নেতারা আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে সংগঠিত করেন এবং ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

এই ছয় দফা দাবিকে ঘিরে ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত দলটি নানাভাবে দমন-পীড়নের মুখে পড়ে।

আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি না হলেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ, দলের প্রচার কাজে বাধা দেওয়া হতো এবং নেতাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হতো বলে জানান মি.আহমেদ।

মুজিবনগর সরকারছবির উৎস,Bangladesh Awami League
ছবির ক্যাপশান,মুজিবনগর সরকার
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে নিষেধাজ্ঞা (১৯৭১)
রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ জানান, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” এর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়।

পরদিন, ২৬শে মার্চ, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে আওয়ামী লীগকে “রাষ্ট্রদ্রোহী” ঘোষণা করে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেন। ইয়াহিয়া খান বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি রাষ্ট্রদ্রোহী দল এবং এটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।”

“তখন আওয়ামী লীগকে তথাকথিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থক বলে মনে করা হতো যারা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসক্রিপশনে চলে,” বলেন মি. আহমদ।

এই ঘোষণার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের ‘ইয়াহিয়া ব্যানড আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সেইসাথে পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ফ্রম দ্য পাস্ট পেইজেস অব ডন: ১৯৭১, ফিফটি ইয়ার্স এগো, আওয়ামী লীগ আউটলড’ প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়।

তবে এই নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক দমন-পীড়ন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দলটি আবার সংগঠিতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় ফিরে আসে।

যুদ্ধ চলাকালীন শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে থাকলেও তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ দলটির সিনিয়র নেতারা ১০ই এপ্রিল ভারতের আগরতলায় “মুজিবনগর সরকার” গঠন করেন।

এ সরকার মূলত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারই ছিলো। এরপর ডিসেম্বরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের পর আওয়ামী লীগের নেতারা ঢাকায় আসতে শুরু করে।

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর দ্রুত আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠিত হয়।রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ জানান, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” এর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়।

পরদিন, ২৬শে মার্চ, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে আওয়ামী লীগকে “রাষ্ট্রদ্রোহী” ঘোষণা করে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেন। ইয়াহিয়া খান বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি রাষ্ট্রদ্রোহী দল এবং এটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।”

“তখন আওয়ামী লীগকে তথাকথিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থক বলে মনে করা হতো যারা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসক্রিপশনে চলে,” বলেন মি. আহমদ।

এই ঘোষণার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের ‘ইয়াহিয়া ব্যানড আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সেইসাথে পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ফ্রম দ্য পাস্ট পেইজেস অব ডন: ১৯৭১, ফিফটি ইয়ার্স এগো, আওয়ামী লীগ আউটলড’ প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়।

তবে এই নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক দমন-পীড়ন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দলটি আবার সংগঠিতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় ফিরে আসে।

যুদ্ধ চলাকালীন শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে থাকলেও তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ দলটির সিনিয়র নেতারা ১০ই এপ্রিল ভারতের আগরতলায় “মুজিবনগর সরকার” গঠন করেন।

এ সরকার মূলত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারই ছিলো। এরপর ডিসেম্বরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের পর আওয়ামী লীগের নেতারা ঢাকায় আসতে শুরু করে।

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর দ্রুত আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠিত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়ে, যার ফলে দলটি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

এই হত্যাকাণ্ডের পর, একই বছরের নভেম্বরে সেনা সমর্থিত খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে সরকার গঠন হয়।

তিনি রাষ্ট্রপতির পদে বসার পর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সে সময় দলটির অনেক নেতা গ্রেপ্তার বা গৃহবন্দি হন। যার কারণে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে যায় আওয়ামী লীগ।

বাংলাপিডিয়ায় আওয়ামী লীগ শীর্ষক নিবন্ধে দলটির ইতিহাস ও ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে জানা যায়।

এছাড়া লরেন্স লিফটশুলজের, ‘বাংলাদেশ: দ্য আনফিনিশড রেভোলিউশন’ বইয়ে উল্লেখ আছে, সামরিক সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ না করলেও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো এবং তাদের নেতাদের ওপর নজরদারি করা হতো।

১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতা—সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামানকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছিলো। যা দলের সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটাই দুর্বল করে দেয়।

এক কথায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট পরবর্তী শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের নামমাত্র অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেও তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল না বললেই চলে।

এরপর ১৯৭৬ সালে সামরিক সরকার পলিটিক্যাল পার্টিজ রেগুলেশনের (পিপিআর) আওতায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন করতে বলে। সে সময় আওয়ামী লীগ নতুন করে নিবন্ধন নিয়ে রাজনীতির মাঠে দৃশ্যমান হতে শুরু করে বলে জানান রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ।

তবে দলটি পূর্ণাঙ্গভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনার হাত ধরে।

১৫ই অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এরপর ১৯৮১ সালের ১৭ই মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন।

তিনি বিদেশে থাকাকালীন ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৮২ সালের এরশাদ–সমর্থিত সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলো।১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদ সরকার আওয়ামী লীগকে সরাসরি নিষিদ্ধ না করলেও, দলটি নানা ধরনের রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, নিষেধাজ্ঞা ও দমনমূলক পদক্ষেপের মুখোমুখি হয়।

রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “এরশাদের সময়ে শুধুমাত্র ঘরোয়া রাজনীতির অনুমোদন দেয়া হতো। মানে রাজনৈতিক নেতারা তাদের ঘরে বসে মিটিং করতে পারবেন, কিন্তু কোন জনসভা, মিছিল করতে পারবেন না।”

গ্লোবাল ননভায়োলেন্ট অ্যাকশন ডাটাবেসে প্রকাশিত, ‘বাংলাদেশ ব্রিং ডাউন এরশাদ রেজিম, ১৯৮৭-১৯৯০’ নিবন্ধে এরশাদের আমলে আওয়ামী লীগের অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

সেখান থেকে জানা যায়, ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করেন।

এসময় সংবিধান স্থগিত করে এবং সমস্ত রাজনৈতিক দল ও ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

ফলে, আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলগুলো রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেনি, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তবে দলটি গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যায়।

এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, হরতাল এবং পত্রপত্রিকায় বিবৃতি দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালের মধ্যে চার দফা গৃহবন্দি করা হয়েছিলো।

পরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে এরশাদ ১৯৮৬ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন এবং নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

ওই বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আবারও সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসে আওয়ামী লীগ।

পরের বছর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যৌথভাবে এরশাদবিরোধী গণআন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের সময় সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে, সংসদ ভেঙে দেয় এবং বিরোধী দলীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে।

১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাপক গণআন্দোলনের ফলে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং আওয়ামী লীগ পুনরায় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ প্রায় ৭৬ বছরের রাজনৈতিক যাত্রায় একাধিকবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে।

সবশেষ দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে গত ১০ই মে রাতে। জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনের নেতাদের দাবির মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার করা এবং বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।

তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো এই রাজনৈতিক দলটি এবারই প্রথম এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।

ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দলটি এর আগেও কয়েকবার রাজনৈতিক সংকট নাহলে সামরিক শাসনের মুখে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। তবে প্রতিবারই আওয়ামী লীগ আবার সংগঠিত হয়ে রাজনীতিতে ফিরে এসেছে।

তবে এবারের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। অন্য যে কোনো সময়ের তুলানায় এবার দলটির সংকট অনেকে বেশি।

কারণ জুলাই -অগাস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পতন হয়েছে।

দলটির প্রধান শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের বড় অংশ দেশ ছেড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার সেই আন্দোলনে ‘গণহত্যা’র অভিযোগে এখন দলটির নেতাদের বিচার চলছে।আওয়ামী লীগের শাসনের সময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, বিরোধী মত দমনের অনেক অভিযোগও রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ বড় ইস্যু হয়ে সামনে আসছে।

ফলে অতীতে বিভিন্ন সংকটে দলটি নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু এবার তাদের বিরুদ্ধেই গণতন্ত্র বিরোধী অবস্থান নেওয়া এবং বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ এসেছে।

আর এমন প্রেক্ষাপটেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবির ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারও সেই দাবির মুখে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে।

বর্তমান বাস্তবতায় এবার দলটির সংকট আগের যে কোনো সময়ের থেকে ভিন্ন বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

মোটা দাগে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ বা নিষ্ক্রিয় হওয়ার ইতিহাসকে সাতটি টাইমলাইনে ভাগ করা যায়।
আরো দেখুন
বিবিসি সংগৃহীত তথ্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *