ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী কে গ্ৰেপ্তারে বাধা দেওয়ায় নারী ও সাংবাদিক সহ আসামি ২৫২ জন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : মোঃ মিজানুর রহমান শান্ত

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে ৫২ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ,এ মামলায় স্থানীয় এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে আসামি করা হয়েছে ,

সোমবার (বারো ই মে) রাতে পুলিশের উপ পরিদর্শক এস আই রিপন মৃধা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান এ থানার পরিদর্শক তদন্ত জামাল উদ্দিন,

এ মামলায় অজ্ঞাত আর ও ১৫০/২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে,

পুলিশ কর্মকর্তা জামাল বলেন, মামলার এজাহারনামীয় তিনজন আসামিকে মামলার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তারা হলেন: মো.হানিফ,বয়স ৫০ বছর,তার ছেলে জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান, বয়স ২১ বছর, ও চাচাতো ভাই শওকত মিথুন, বয়স ৩৬ বছর,তারা নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নগরের বাসিন্দা।

জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান বয়স ২১বছর,প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদদাতা এবং প্রথম আলো পত্রিকার পাঠক সংগঠন,বন্ধুসভা’র নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির পরিবেশ ও সমাজ,কল্যাণ সম্পাদক। কিশোর ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো,তে ও কন্ট্রিবিউটর হিসেবে জিসান লেখালেখি করে বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।

জুলাই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে নেতৃত্বে দেওয়া ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলা কমিটির সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জিসান জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন,আন্দোলনের সময় পায়ে আঘাত প্রাপ্ত ও হন জিসান।

জিসানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আন্দোলন চলাকালীন নারায়ণগঞ্জে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা এ ছাত্রনেতা।

জিসানের চাচা হাবিবুর রহমান বলেন,রাত পৌনে একটার দিকে বাসায় আসে সদর মডেল থানা পুলিশ, কোনো সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই তারা বাসায় ঢুকে তল্লাশি করতে শুরু করে,পরে জিসান ও তার বাবার নামে মামলা আছে বলে থানায় নিয়ে চলে যায়,কিন্তু কী মামলা সেইটা আমাদের বলে নাই।

সকালে আমরা জানতে পারি আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধার ঘটনা কেন্দ্র করে মামলা দেওয়া হয়েছে,কিন্তু অভিযানের রাতে জিসান বা তার বাবা ওই এলাকাতে দেওভোগ যায়নি,আমাদের বাসা থেকে দেওভোগ তো কয়েক কিলোমিটার দূরে।

গ্রেপ্তার শওকত মিথুন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর, তিনি ‘নারায়ণগঞ্জ টিভি,তে প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতা ও করেছেন, জুলাই আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে করা তার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।

মামলায় মিথুনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে ও আসামি করা হয়েছে।

মিথুনের বড়ভাই শাহাদাত হোসেন মামুন বলেন,ঘটনার রাতে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরছিল মিথুন, অনেক রাতে সে বাড়িতে ফেরে,ঘটনার সময় সে ছিলো ই না, কিন্তু গতরাতে পুলিশ মিথুনের সাথে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ও গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল,পরে আমরা অনেক অনুরোধ করলে তারা তাকে রেখে যায় কিন্তু মিথুনকে ধরে নিয়ে যায়।

এছাড়া,পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েক জন নেতা,কর্মীর পদবি উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার সমর্থকরা বাধা প্রদান করে এবং সড়কে ট্রাক দিয়ে বালি ফেলে ও বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে রাত ভর পুলিশকে ও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে নেবার পথে বঙ্গবন্ধু সড়কের কালি বাজার মোড়ে আইভীর সমর্থক, আওয়ামী লীগের নেতা,কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করে। পরে তারা আইভীকে বহন কারী পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট,পাটকেল ছোড়ে।

এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।

গত আট ই মে রাতে আইভীকে গ্রেপ্তার করতে নগরীর দেওভোগে তার পৈতৃক বাড়ি,চুনকা কুটিরে গেলে তার সমর্থক ও স্থানীয় এলাকা বাসী বাধা দেন। আইভী ও,রাতের আঁধারে কোথাও যাবেন না বলে জানান,পরে সকালে স্বেচ্ছায় গাড়িতে ওঠেন তিনি, তাকে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কালি বাজার মোড়ে পুলিশের গাড়ি বহরে হামলা করা হয়।

এতে পুলিশ সহ আইভীর বেশ কয়েকজন সমর্থক আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সাংবাদিক জানান, মহানগর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা,কর্মীরা আইভীকে বহন করা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট,পাটকেল ছোড়েন, ওই সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও ঘটে।

ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও তে হামলা কারীদের মধ্যে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতা, কর্মীকে দেখা যায়,পরে তারা বঙ্গবন্ধু সড়কে ,আওয়ামী লীগ ও আইভীর’ বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মিছিলও করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন তাসমিন আক্তার বলেন,সাবেক মেয়র আইভি কে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশ বাধার সম্মুখীন হন, কিন্তু রাত ভর পুলিশ খুবই ধৈর্যের সাথে সেখানে অবস্থান করে এবং সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়, তাকে গ্রেপ্তারের অভিযানে বাধা দেওয়ার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।

ঘটনার সময়ের সাক্ষ্য,প্রমাণ, ইন্টেলিজেন্স তথ্য ও সিসি টিভি ফুটেজ যাচাই,বাছাই করে আসামিদের শনাক্ত করে মামলায় এজাহার ভুক্ত করা হয়েছে,দাবি এ পুলিশ কর্মকর্তার।

জাতীয় নাগরিক পার্টির এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী বলেন,আমরা পাঁচ আগস্টের আগে এই ধরনের ঘটনা দেখতাম,তখন অজ্ঞাত মামলায় ও মানুষকে গ্রেপ্তার করা হতো,এইখানে যদি বাবা আওয়ামী লীগ করে থাকে, তাহলেও তো তার দোষে তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যেতে পারে না পুলিশ, যে অন্যায় কারী তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ সহ তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে,এই ধরনের প্র্যাকটিস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,কেননা আইনে বলা আছে,একজন নির অপরাধ ও যেন হয়রানি না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *