সাবেক ছাত্রদল নেতা কবির হোসেনের চরিত্র হননের উদ্দেশ্য কি ?

মোঃ হামিদুজ্জামান জলিল স্টাফ রিপোর্টার

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর সরকারী কে এমএইচ অনার্স কলেজের সাবেক ভিপি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক কবির হোসেনের চরিত্র হননে উঠে পড়ে লেগেছে এক বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। সম্প্রতি তিনি এক ফেসবুক পোষ্টে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ কবির হোসেনের বিরুদ্ধে হাস্যকর ও নিজের ব্যক্তিস্বর্থ চরিতার্থ করতে ভিডিওসহ একটি পোষ্ট করে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর এলাকায় বিএনপির নব্বই দশকের নেতাকর্মীদের মাঝে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। একজন সাবেক সফল ছাত্র দলের নেতার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিশ্রমী ইতিহাস এবং বিশাল অর্জনকে যে সামান্য একটি পোষ্টে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া যায় না তা ওই মহলটি হয়তো জানেই না। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কবির হোসেন প্রথম জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কোটচাঁদপুর পৌর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সাথে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে কোটচাঁদপুর সরকারি কে এম এইচ অনার্স কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত সবুর কবির পরিষদ থেকে সর্বোচ্চ ভোটে জিএস নির্বাচিত হন। কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন তারই আন্দোলনের ফসল। এই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্ম কিছুই জানে না। ছাত্র সংসদের জিএস পদ কাজে লাগিয়ে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তিনি কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরের এলাকায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ভীত মজবুত করেন। আজকে ঝিনাইদহ-৩ সংসদীয় আসনে যে শক্তিশালী বিএনপি বিরাজমান তার অনেকাংশ কবির হোসেনের শ্রম, মেধা ও দক্ষতার উপর দাড়িয়ে। ফলে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে শহিদুল ইসলাম মাষ্টার জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে অন্যতম কুশিলব ছিলেন ছাত্রদল নেতা কবির হোসেন। ১৯৯১ সালে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়ে কোটচাঁদপুর থানা ছাত্রদলের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং জেলা ছাত্রদলে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আবার কোটচাঁদপুর থানা বিএনপির পদে থেকে সেখানেও দলকে সুসংগঠিত করেন। ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অভিমানে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেও কখনই শহীদ জিয়ার আদর্শের দল ছেড়ে অন্য দলে যোগদান করেননি। দলীয় কর্মকান্ড ছেড়ে ব্যবসা বানিজ্যে মনোনিবেশ করেন। ২০১০ সালে ফ্যাসিষ্ট এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চলের সাথে উকড়ির বিল নিয়ে আইনী যুদ্ধ করেন। বিল ইজারা পেলেও এমপি চঞ্চল কোনোভাবেই এই ছাত্রনেতার নিয়ন্ত্রিত সমিতিকে উকড়ির বিলের দখলে যেতে দেয়নি। ফলে তিন বছরে সাবেক ছাত্রনেতা কবির হোসেন মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু তিনি তো দমে যাওয়ার পাত্র নন। তাই এমপি চঞ্চলের জোর করে উকরির বিলের দখলে থাকার মেয়াদ শেষ হলে এই সমিতির মাধ্যমে তিনি আবারও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ছয় বছরের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে ইজারার আবেদন করেন। ইজারা পেয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবর বাৎসরিক ২১ লাখ টাকা খাজনা পরিশোধ করে চুক্তি সম্পাদনের পর দখলের চিঠি পেলেও তৎকালীন এম পি চঞ্চল জোর করে এক বছর উকড়ির বিলের দখল ছাড়েনি। ফলে একুশ লাখ টাকা পানিতে পড়ে। পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় বিলের দখল পান। কিন্তু চঞ্চলের অত্যাচার নির্যাতন ও কঠোরতার কারণে সেখানে ভালোভাবে মাছ চাষ করা সম্ভব হয়নি। এরপর নবী নেওয়াজ এমপি হলে দুইজনে মিলে চেষ্টা সাবেক ছাত্রদল নেতা কবিরকে উকড়ির বিল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করেন। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে। এভাবে নানা দঅত্যাচার নির্যাতনে ছয় বছর পার হয়ে যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে চঞ্চল আবারও ক্ষমতায় আসলে শুরু হয় ভূমি মন্ত্রণালয়ে সীমাহীন যুদ্ধ। এই আইনী যুদ্ধেও এই কবির হোসেনের সমিতি ছয় বছরের জন্য উকরির বিল পান। কিন্তু ফ্যাসিষ্ট এমপি চঞ্চল তার পেটোয়া বাহিনী দিয়ে জোর করে বিলের পানি কেটে খাল দিয়ে বের করে দেয়। এ অবস্থায় কবির হোসেন বিল ছেড়ে পালিয়ে গেলেও আইনী যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। সাবেক ছাত্র নেতা কবির হোসেন অভিযোগ করেন, জুলাই বিপ্লবের পর সরকারের পতন হলে উকড়ির বিল নিয়ে কোটচাঁদপুরের খান পরিবারের চক্রান্ত শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা শিমুল খান কুখ্যাত চঞ্চলের নির্দেশে উকড়ির বিল এই ছাত্রনেতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য গুড়দহ গ্রামের খলিল মুহুরিকে দায়িত্ব দেন। একই সাথে এই ছাত্রনেতার লোকদের দখলে থাকা ও সালাহউদ্দিন মিয়াজীর কাছ থেকে লীজ নেওয়া পুকুরগুলো জোর করে দখলের দায়িত্ব দেন, যারা এই সালাহউদ্দিন মিয়াজির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। সালাউদ্দিন মিয়াজির কাছে ভূমিহীনদের বিক্রি করা চঞ্চলের দোসররা শিমুলের নির্দেশে প্রশাসনের উদাসীনতায় এই পুকুরগুলো মাছসহ জোর করে দখল করে নিয়েছে। আর তার আগে শিমুল খান চঞ্চলের এই দোসরদের নিয়ে মহেশপুর থানার সামনে নিজে উপস্থিত থেকে মানববন্ধন করেন। আর ওখান থেকেই বিল পুকুর দখলের নির্দেশ দেন। এই শিমুল খান তারই ক্যাডার চামচা খলিলের সমিতির মাধ্যমে শিমুল খান নিজে বিলের জন্য প্রত্যেক জায়গায় যে সর্বোচ্চ দৌড়ঝাপ করলেও এবারও উকড়ির বিল ছয় বছরের জন্য এই সাবেক ছাত্রনেতার সমিতি অনুকুলেই ইজারা পান। কিন্তু শিমুল খান তার দলীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেও যখন ইজারা পাননি তখনই বাকা পথ ও নিকৃষ্ট কুচক্রী পথ বেছে নেন। সাবেক এই ছাত্রদল নেতাকে আওয়ামী লীগ বানানোর কুট কৌশলের আশ্রয় নেন। একটি ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তিনি নোংরামি শুরু করেন। সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন মিয়াজি বিএনপির জেলা অফিস ভাংচুর মামলায় অজ্ঞাত আসামী হিসাবে দুই মাস দশ দিন জেল খেটে জামিনে বের হওয়ার দিন কবির হোসেন জেল গেটে তার পুকুর উজারার টাকা দিতে যান। এ সময় তিনি সৌজন্যতার খাতিরে হাও মেলান। কয়েক সেকেন্ডের এই ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোষ্ট করে তিনি বিশ্রি ভাষায় এই ছাত্রনেতাকে ছোট করার চেষ্টা করেছেন। অথচ এই শিমুল খান বিগত ১৬ বছর তার আপন আত্মীয় ফ্যাসিষ্ট চঞ্চলের সীমাহীন ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন বলে কবির হোসেন অভিযোগ করেন। বিএনপি নেতা হলেও তাঁদের ভয়ে প্রশাসন কাঁপতো। কবির হোসেন মন্তুব্য করেন, ছয় মাসের এমপি সালাউদ্দিন মিয়াজী দুই মাস কারাগারে আটক থাকলেও কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর এলাকার বিএনপি জামায়াত তার বিরুদ্ধে মামলা তো দুরের কথা একটা জিডিও করতে পারেনি। অথচ জামিনের পর জেল গেটে পুকুর ইজারার টাকা দিতে গিয়ে আমি আওয়ামী লীগার হয়ে গেলাম ? সেলুকাস! কি বিচিত্র রাজনীতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *