
মোঃ নাসিরউদ্দিন ক্রাইম রিপোর্টার
২৯শে মে ২০২৫ বৃহস্পতিবার
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)-এর চেয়ারম্যানের আসন বর্তমানে শূন্য রয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানের মৃত্যুর পর থেকেই এ পদ ঘিরে দপ্তরের অভ্যন্তরে চলছে নানা গুঞ্জন, আলোচনা ও তদবিরের প্রতিযোগিতা। কে হবেন নতুন চেয়ারম্যান—তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
বিএমডিএ’র সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী এ পদটি বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন, একজন যোগ্য, দক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত ব্যক্তিকে এ পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
বিশ্বস্ত সূত্রগুলো জানায়, পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যকে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন সদস্যের নাম আলোচনায় বেশি উঠে আসছে। তবে অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মত, এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া উচিত যিনি সুশাসনের পক্ষে এবং ব্যক্তিগতভাবে “ক্লিন ইমেজ” সম্পন্ন।
তারা আরও মনে করেন, যেহেতু বোর্ড সদস্যরা সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে অভিজ্ঞ, তাই এ পদে সাধারণত পর্ষদের মধ্য থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে হওয়ায় এই অঞ্চলের কাউকে চেয়ারম্যান করা হলে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“আমরা এমন একজনকে চাই, যিনি কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য করে দায়িত্ব পালন করবেন।”
এদিকে, বিভিন্ন মহলে তদবির ও লবিং জোরদার হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের কেউ কেউ নিজস্ব প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও জানা গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বিএমডিএ’র নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির নীতিগত স্বচ্ছতা, দক্ষ প্রশাসনিক পরিচালনা এবং জনগণের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখা জরুরি। তা না হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং জনস্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চূড়ান্তভাবে কে হচ্ছেন বিএমডিএ’র নতুন চেয়ারম্যান, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সবার দৃষ্টি এখন সরকারের দিকে। বিএমডিএ’র পরিচালনা পর্ষদে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কৃষি খাতের বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিএমডিএ ১৯৯২ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত হয়। এর আগে, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যা ১৯৯০ সালে শেষ হয়। প্রকল্পটির সফলতা থেকেই বিএমডিএ গঠিত হয়, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, সেচ ব্যবস্থার বিস্তার, খাল-পুকুর পুনঃখনন, সড়ক নির্মাণ ও বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা।
বিএমডিএ’র সর্বশেষ চেয়ারম্যান ছিলেন ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি গত ২৪ মে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আগে নির্বাহী পরিচালক এবং পরবর্তীতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সময়ে সংস্থাটি বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ ও কৃষিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে।