ইসমাইল খান নিয়াজ
চিপ রিপোর্টার
জৈন্তাপুরে সুদখোর ও দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে সর্বহারা হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ
জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর এলাকায় এক দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বহারা হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দাদন ব্যবসায়ীর মামলায় বাড়ি ছাড়া হয়েছে ১০-১৫টি পরিবার। দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পর থেকে রক্ষা পেতে আদালতে অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালে মোদির দোকান পরিচালনার জন্য টাকার প্রয়োজন হলে ব্যাংক লোন করার সিদ্ধান্ত নেন শিকারখাঁ গ্রামের মনফর আলীর ছেলে মো. তজমুল আলী (৩২)। বিষয়টি জানতে পেরে এবং বিবাদী তজম্মুল হোসেন ওরফে টিয়া হাজী পূর্ব পরিচিত হওয়ায়, বাদীর পিতা মনফর আলীর মাধ্যমে আশ্বাস দেন ব্যাংক লোন করার দরকার নেই। যত টাকার প্রয়োজন দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেন ওরফে টিয়া হাজী ধার দেবেন। এই কথার প্রেক্ষিতে ব্যাংক লোন না নিয়ে, জুডিশিয়াল ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প ও বাদীর পিতার অগ্রণী ব্যাংক গ্যাস ফিল্ড শাখার হিসাব নং ০২০০০০৩২০১৭৬৬-এর ব্ল্যাংক চেক (পাতা নং ১১৯২৩৮০৯৩১১) স্বাক্ষর নিয়ে ৩ লাখ টাকা কর্জ প্রদান করেন।
পরবর্তীতে সুচতুর দাদন ব্যবসায়ী তজম্মুল হোসেন ওরফে টিয়া হাজী কৌশল অবলম্বন করে ৩ লাখ টাকার বিপরীতে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। কিন্তু ব্ল্যাংক চেক ও জুডিশিয়াল ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে জানান, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তজমুল আলীকে ৯ লাখ টাকা এবং তার পিতা মনফর আলীকে ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ভুক্তভোগী তজমুল আলী অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, এভাবে টিয়া হাজী এলাকার সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে জুডিশিয়াল ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প ও ব্ল্যাংক চেক নিয়ে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য:
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, টিয়া হাজীর খপ্পরে পড়ে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। মিনতি রায় জানান, তিনি টিয়া হাজীর কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ১ লাখ টাকা শোধ করলেও, তার বিরুদ্ধে ৭ লাখ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডের কর্মচারী বশির আহমদ জানান, তার পরিচিত একজন ব্যক্তি বশির আহমদকে জিম্মাদার রেখে ৫ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। পরে বশির আহমদ নিজের মানসম্মানের ভয়ে হাউজ বিল্ডিং লোন নিয়ে ওই ৫ লাখ টাকা শোধ করেন। এরপরও জিম্মাদারসহ তার নিকট আত্মীয়ের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এলাকার আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী একই রকম অভিযোগ করেন। তারা টিয়া হাজীর কর্মকাণ্ড তদন্ত করে ন্যায্য বিচার দাবি করেন এবং তার হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।
অভিযুক্তের বক্তব্য:
অভিযুক্ত তজম্মুল হোসেন ওরফে টিয়া হাজী জানান, তিনি জমি কেনা-বেচার ব্যবসা করেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘আমি সুদের ব্যবসা করি না। আদালতে কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে না। যারা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তাদের কাছে আমি বৈধভাবে টাকার হিসাব চাই।’
পুলিশের বক্তব্য:
জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, মো. তজমুল আলী আদালতের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। আদালত অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করব।
ইপেপার
সম্পাদক ও প্রকাশক ঃ মাহমুদুল হাসান মাহমুদ
বার্তা সম্পাদকঃ কে এম জাহিদ হাসান
প্রধান কার্যালয়ঃ ২৬৩/ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
www.dailyags.com © 2024