সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার- জাহারুল ইসলাম জীবন এর সম্পাদনায় লেখা প্রতিবেদন।
মধ্যপ্রাচ্য সহ গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের কাছে ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফা উপত্যকার অবরুদ্ধ মানুষেরা এক হৃদয়বিদারক বার্তা পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল, ২০২৫) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে পাঠানো এই দীর্ঘ ও মর্মস্পর্শী বার্তায় উঠে এসেছে দীর্ঘদিনের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এবং আসন্ন ধ্বংসের এক করুণ চিত্র।
বার্তায় ফিলিস্তিনের মানুষেরা প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববাসীর আত্মঃবিবেক, মানবতা এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও বীরত্বের প্রতি। তারা অভিযোগ করেছেন, মুসলিম জাতি হয়েও অন্য মুসলমান ভাইকে রক্ষা করার ঈমানী দায়িত্ব ও ঐক্য আজ অনুপস্থিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নবী-রাসূল ও সাহাবীদের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন, মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল আকসা মসজিদ এবং জেরুজালেম আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
গাজার মানুষেরা উল্লেখ করেছেন, তারা কাপুরুষের মতো জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যাননি। বরং মাতৃভূমিতেই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পবিত্র ভূমি ও আল আকসা মসজিদ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তারা তাদের স্ত্রী, পুত্র, পরিজনদের রক্তাক্ত লাশ দাফন ও জানাজা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন, খাদ্য ও পানির অভাব সত্ত্বেও বিশ্ববাসীর কাছে তাদের দুর্বিষহ পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে জীবন বাজি রেখে, সম্পদ উৎসর্গ করে এবং ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পরেও ফিলিস্তিনের মানুষ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের অভিযোগ, এই দীর্ঘ অসহায়ত্বে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি।
বার্তার শেষ অংশে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বিশ্ববাসীর কাপুরুষতা ও স্বার্থপরতার সুযোগ নিয়ে ইসরায়েল হয়তোবা গাজা ও রাফার বাসিন্দাদের পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হয়তো এই ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনের নাম মুছে যাবে।
মৃত্যুর সর্বশেষ দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনের মানুষেরা তাদের শেষ আকুতিতে বলেছেন, তারা মুসলিম জাতির গর্ব ও অহংকার জেরুজালেম ও আল আকসা রক্ষায় তাদের শেষ সম্বলটুকুও উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ব মুসলিমের অনৈক্য ও দায়িত্বহীনতার কাছে তারা পরাজিত হয়েছেন। তাই তারা বিশ্ববাসী ও নামধারী মুসলিমদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন।
বার্তায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, খুব শীঘ্রই গাজা ও রাফার আকাশ সাদা কাফনে মোড়ানো লাশের মিছিলে ছেঁয়ে যাবে, আর ফিলিস্তিন পরিণত হবে এক বিরানভূমিতে। তারা মহান আল্লাহর কাছে তাদের জবাবদিহিতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ববাসী সেই মহান রবের কাছে কী জবাব দেবে?
চলে যাওয়ার আগে ফিলিস্তিনের মানুষেরা জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতা লোভী শাসকদের তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন। তারা ইসরায়েলের সর্বশেষ সতর্কবার্তার কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফার উপর ফ্লোরিন গ্যাস মিশ্রিত বোমা ব্যবহারের হুমকির কথা বলা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীদের সরে যেতে বলা হয়েছে।
গাজার মানুষেরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, আজকের পর থেকে গাজা ও রাফার শিশুরা আর ‘আল্লাহ বাঁচাও’ বলে চিৎকার করবে না। তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কীভাবে একটি বিশ্ব এই দৃশ্য সহ্য করতে পারছে। তারা আল্লাহর কাছে জালিমের বিচার চেয়েছেন।
বিদায় বেলায় ফিলিস্তিনের মানুষেরা বিশ্ববাসীর জন্য দোয়া করেছেন এবং নতুন করে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যদি কখনো সুযোগ আসে পবিত্র ভূমি জেরুজালেম ও আল আকসা মসজিদ রক্ষার এবং এই পবিত্র মাটির গন্ধ নেওয়ার, তবে সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জালিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তারা বিশ্বাস করেন, সেই দিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসবে এবং মুসলমানরা একটি নতুন পৃথিবী লাভ করবে।
এই হৃদয়বিদারক বার্তাটি ফিলিস্তিনের মানুষের অন্তিম আর্তনাদ হিসেবে বিশ্ব বিবেকের কাছে এক কঠিন প্রশ্ন রেখে গেল। মানবতা আর মানবাধিকারের মানবতাবাদীরা আজ কোথায় দাঁড়িয়ে, আর মুসলিম বিশ্বের ঐক্যই বা কোথায়? গাজা ও রাফার আকাশে কি সত্যিই আসন্ন ধ্বংসের কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো খুব শীঘ্রই বিশ্ববাসী মর্মান্তিকভাবে জানতে পারবে।
ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফা বাসীর সর্বশেষ এই বার্তায় যে স্পর্শকাতর ও মর্মাহত বাণী বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করেছিল,বার্তা প্রচারের কয়েক ঘন্টার মধ্যে হানাদার হিংস্র বর্বর ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স ব্যবহার করছে ফ্লোরিনের কেমিক্যাল উইপন সম্মলিত বোমা, এই নিক্ষেপকৃত বোমা হামলার কযেক ঘন্টার মধ্যে কেঁড়ে নিলো ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফা বাসির জীবনী শক্তির নিশ্বাসকৃত সর্বশেষ প্রাণের স্পন্দন টুকুও! সত্য ও প্রমানিত যে, বিশ্বের মানচিত্রে ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফার ভূখণ্ড আজ ধ্বংস স্তূপের বিরান ভুমিতে! এই বিরান ভূমি-ই আজ মানব শূন্য অবস্থায় পতিত হয়ে পড়ে রয়েছে।
ইপেপার
সম্পাদক ও প্রকাশক ঃ মাহমুদুল হাসান মাহমুদ
বার্তা সম্পাদকঃ কে এম জাহিদ হাসান
প্রধান কার্যালয়ঃ ২৬৩/ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
www.dailyags.com © 2024