স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ জেলা মোঃ রুহুল আমিন
বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ মানুষের বেশি সমস্যা জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ। বর্তমান খসড়া আইনে যেসব অপরাধ ও দণ্ডের প্রস্তাব পাস আছে। যা আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভূমি জবর দখল, ক্ষতি, জাল, কাগজ পত্র তৈরি করে জালিয়াতি বা প্রতারণা বন্ধ করাই এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার দীর্ঘ সময় হ্রাস করে জনগণের ভোগান্তি দূর করা এবং ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকার দেয়ার জন্য আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসব অপরাধের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অন্য আইনে যা কিছু বলা হোক না কেন, এই আইনটি সেখানে প্রাধান্য পাবে। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, আদালতে বা মোবাইল কোর্ট আইনের মাধ্যমে এই আইন প্রয়োগ করা যাবে।
প্রস্তাবিত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১ আইনে যেসব অপরাধে চিহ্নিত করে সে গুলোর জন্য যে সাজা প্রস্তাব করা হয়েছে:-
১- জাল দলিল তৈরি করলে কারাদণ্ড কি হবে:-
যদি কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি খাস ভূমি বা কোন প্রতিষ্ঠানের জমির দলিল জাল করেন, তাহলে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২- মালিকানার অতিরিক্ত জমির দলিল সম্পাদন:-
কোন ব্যক্তি যদি যতটুকু জমির মালিকানা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি জমির দলিল করেন, তাহলে তার দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, তিন লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
৩:- একই জমি একাধিক বার বিক্রি:-
কোন ব্যক্তি যদি তার বিক্রিত জমি পুনরায় বিক্রি করার উদ্দেশ্যে দলিল করে, তাহলে তার দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, তিন থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এবং জামিন অযোগ্য অপরাধ হবে।
৪:- বায়নাকৃত জমি পুনরায় চুক্তি করা:-
বিক্রিত চুক্তি বা বায়না চুক্তি করার পর অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে আবার চুক্তি করলে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, তিন থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
৫:- তথ্য গোপন করে দানপত্র :-
তথ্য গোপন করে বা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অথবা প্রতারণা করে যদি কোন ব্যক্তি অন্য আরেক জনের কাছ থেকে জমির জাল দলিল করে, তাহলে সেটা একটা অপরাধ হবে। সে জন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
৬:- সহ- উত্তরাধিকারী কে বঞ্চিত করে নিজের নামে দলিল:-
উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, অন্যকে বঞ্চিত করে নিজের অংশের চেয়ে বেশি জমি দলিল করা হলে ছয়মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
৭:- সহ- উত্তরাধিকারী কে বঞ্চিত করে নিজের প্রাপ্যতার চেয়ে বেশি জমি বিক্রি:- উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, অন্যকে বঞ্চিত করে নিজের অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করলে অপরাধ হবে। সে জন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড , ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
৮:- সহ- উত্তরাধিকারীর জমি দখল করে রাখা:-
কোন ব্যক্তি যদি তার শরীক বা সহ- উত্তরাধিকারীর প্রাপ্য জমি, জমি জোর করে দখল করে রাখে , সে জন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
৯:- অবৈধ দখল :-
বৈধ কাগজপত্র না থাকার পরেও কেউ যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন, সরকারি খাস ভূমি বা কোন সংস্থার জমি জোর করে দখল করে রাখে, সে জন্য এক বছর থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লক্ষ টাকা থেকে তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১০:- অবৈধভাবে মাটি কাটা ,বালি উত্তোলন:-
বেআইনি ভাবে সরকারি বা বেসরকারি ভূমি, নদীর পাড়, তলদেশ ইত্যাদি থেকে মাটি বা বালু উত্তোলন করলে ( কোন ক্ষতি হোক বা না হোক) অপরাধ হবে। সেজন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড,৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১১:- জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করার শাস্তি :-
বেআইনি ভাবে মাটি ভরাট করে বা অন্য কোন ভাবেই জলাবদ্ধতা তৈরি করলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। সেজন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড,৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১২:- বিনা অনুমতিতে জমির উপরের স্তর কেটে নেয়া:-
জমির মালিকের অনুমতি ছাড়া যদি কেউ উপরের স্তর থেকে মাটি উত্তোলন করা বা করানো হয়। তাহলে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১৩:- বেশি জমি লিখিয়ে নেয়া:-
এক্ষেত্রে যদি জমির পরিমাণ এক একরের বেশি হয় এবং ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট জড়িত থাকে, তাহলে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১৪:- অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা:-
এই আইনের বর্ননা করা যেকোনো অপরাধ সংঘটনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করলে সেই ব্যক্তির ও অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির মতো সাজা হবেই।
১৫:- প্রতিবেশ ভূমি মালিকের ক্ষতিসাধন:-
কেউ যদি সহ- মালিক বা পাশাপাশি থাকা জমির ক্ষতি করেন বা পরিবর্তন আনেন, তাহলে এক বছর থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, তিন লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১৬:- অবৈধ দখল গ্রহণ ও বজায় রাখতে পেশিশক্তি:-
অস্ত্র প্রদর্শন, প্রাণনাশের হুমকি ইত্যাদি দেয়া হলে সেটা জামিন অযোগ্য অপরাধ হবে।
সেজন্য ছয় মাস থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লক্ষ টাকা থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১৭:- বিনা অনুমতিতে পাহাড় বা টিলা পাদদেশে বসতি:-
অনুমতি ছাড়া কোন পাহাড় বা টিলার পাদদেশে বা পাহাড় পর্বতে বসতি স্থাপন করা হলে তাকে যে কোনো সময় উচ্ছেদ করা হবে। অবৈধভাবে বসতি স্থাপনের জন্য তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১৮:- নদী,হাওর,বিল বা জলাভূমির ক্ষতি:-
মাটি,বালি বা আবর্জনা দ্বারা,অন্য কোন পদার্থ বা উপায়ে অবকাঠামো নির্মাণ করে নদী, হাওর, বিল বা জলাভূমির আংশিক ক্ষতি করা হলে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড, অনধিক এক লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১৮:- অধিগ্রহণের পূর্বে অতিরিক্ত মূল্যে জমির দলিল:-
কোন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে, এমন খবর জানতে পেরে কেউ যদি সরকারি নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত মূল্যে ভূমি নিবন্ধন করে, তাহলে সেটি একটি অপরাধ বলে গণ্য হবে। সেজন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
১৯:- জনসাধারণের ব্যবহার্য বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জমির দখল:-
খেলার মাঠ, জলাশয়, কবরস্থান, মসজিদ, মন্দির, গির্জা দরগা, শিক্ষা বা ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি দাতব্য বা জনপ্রতিষ্ঠানের জমি দখল, সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করা বা করতে সহায়তা করলে। তাকে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড দুই লাখ টাকা পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
২০:- রিয়েল এস্টেট কর্তৃক জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর সংক্রান্ত অপরাধ:-
একই জমি একাধিক ব্যক্তির বরাবর দলিল করে দেয়া, চুক্তি মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে জমির দলিল দিতে না পারা, ফ্ল্যাট বিক্রয়ের পর ঘোষিত সময়ের মধ্যে হস্তান্তর করতে না পারা, ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হলেও দলিল দিতে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি কর্মকান্ড অপরাধ বলে গণ্য হবে। সেজন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড ১০ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
২১:- চুক্তির পর ভূমি মালিক কে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেয়া:-
জমির মালিকের সঙ্গে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট কম্পানির চুক্তি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালিকের অংশ তাকে বুঝিয়ে না দিলে বা দখল না দিলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা।
২২:- সরকারি বা বেসরকারি এবং সংস্থার জমি বেআইনি দখল:-
এই রকম কর্মকাণ্ড করা হলে ছয়মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, এক লক্ষ টাকা থেকে চার লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা।
২৩:- পুনরায় অপরাধ করা:-
এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধে একবার সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর পুনরায় সেই অপরাধ করলে আগে যে ধারায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, তার দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বিবিসি কে বলেছিলেন " বিচারাধীন মামলার ৬০ শতাংশ বেশি মামলা জমি জমা সংক্রান্ত। অধিকাংশ মামলার রুট হচ্ছে জমি নিয়ে।
ইপেপার
সম্পাদক ও প্রকাশক ঃ মাহমুদুল হাসান মাহমুদ
বার্তা সম্পাদকঃ কে এম জাহিদ হাসান
প্রধান কার্যালয়ঃ ২৬৩/ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
www.dailyags.com © 2024