গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নিউমোনিয়ায় একজন যুবকের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলেও সেটিকে 'হত্যা' হিসেবে প্রচার করে একটি পরিকল্পিত মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে—"Septicemia due to pneumonia", কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এটিকে খুনের মামলা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এই একটি মৃত্যুকে ঘিরে এখন এলাকায় আতঙ্ক, বিভ্রান্তি আর প্রতিহিংসার অস্বস্তিকর পরিবেশ। সরকারি হাসপাতালর ডাক্তার যেখানে স্বাভাবিক অসুস্থতা বলছেন, রাজনীতি সেখানে তা বানিয়ে ফেলছে 'ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ড'!
নিহত মো. রুবেল মিয়া (৩২) বারিষাব ইউনিয়নের বারাব গ্রামের চাঁন মিয়ার সন্তান। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিয়েবাড়িতে গিয়ে অপ্রীতিকর আচরণ করেন। স্বেচ্ছাসেবীরা বাধা দিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ওই সময় রুবেলের শরীরে জ্বর ছিল এবং মুখে মদের গন্ধ ছিল।
এর তিন দিন পর (২৫ এপ্রিল ২০২৫) তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ৮টায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে দেওয়া সনদে মৃত্যুর কারণ লেখা হয়: "Septicemia due to pneumonia" অর্থাৎ, নিউমোনিয়ার কারণে শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে মৃত্যুর কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এই স্বাভাবিক ও প্রমাণিত রোগজনিত মৃত্যুকেও সাজানো হয়েছে ‘হত্যা’ হিসেবে।
এ ঘটনায় নিহতের মা ফাতেমা বেগম কাপাসিয়া থানায় ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে একজনকে। অথচ মামলায় চিকিৎসকের প্রতিবেদন বা অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখই করা হয়নি!
স্থানীয়দের অভিযোগ, রুবেল আগে সেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু মামলায় নাম এসেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। এতে স্পষ্ট হচ্ছে, মৃত্যুকে পুঁজি করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত চালানো হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা আমানত উল্লাহ্ নিহত পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় করে ঘটনাটিকে হত্যার মোড়ক পরাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। স্থানীয়রা আরও জানান, “রাজনৈতিক লড়াইয়ে একটা লাশ পুঁজি করে যদি মানুষকে জেলে পাঠানো হয়, তাহলে সামনে কি বাকি থাকবে ?”
চিকিৎসকের মৃত্যুর কারণ সনদ উপেক্ষা করে মামলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা হলে, সেটা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষতির কারণ নয়, এটি বিচার ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এমন ব্যবহার ভবিষ্যতে আরও সাধারণ মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
কাপাসিয়া থানার ওসি আবদুল বারিক বলেন, “বাদীপক্ষ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছে। তদন্ত করে দেখা হবে, কেউ নির্দোষ হলে পরবর্তীতে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।”
এই ঘটনা কাপাসিয়াবাসীর সামনে একটি বড় প্রশ্ন উঠেছে, একজন অসুস্থ মানুষের মৃত্যু কি রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে? যেখানে রোগের স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে গিয়ে 'হত্যা'র মামলা ঠুকে দেওয়া কি আইন ও ন্যায়ের পরিপন্থী নয় ?
ইপেপার
সম্পাদক ও প্রকাশক ঃ মাহমুদুল হাসান মাহমুদ
বার্তা সম্পাদকঃ কে এম জাহিদ হাসান
প্রধান কার্যালয়ঃ ২৬৩/ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
www.dailyags.com © 2024