(হরিপুর উপজেলা প্রতিনিধি: মিলন খান)
হরিপুরে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক উৎসব শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে দক্ষিণ সোনামতি ছাত্রকল্যাণ পরিষদ। দিনব্যাপী আয়োজনে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ও জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল দর্শকনন্দিত ও হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। এ আয়োজন শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়—একটি প্রেরণার বার্তা, যা তরুণ সমাজকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও দিকনির্দেশনা দেয়।

সকালের শুরুতেই মাঠে গড়ায় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। স্থানীয় তরুণদের চারটি দল অংশ নেয় এই আয়োজনে। খেলার মাঠে ছিল উত্তেজনা, উৎসাহ আর চিৎকারে মুখর পরিবেশ। ব্যাট-বলের লড়াইয়ে একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছে প্রতিটি দল। খেলায় অংশগ্রহণকারী তরুণরা জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার এমন আয়োজন তাদের মানসিক বিকাশ ও শৃঙ্খলার পথে সহায়ক।

ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষে শুরু হয় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফল ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে অনন্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহার তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত অতিথিদের হাত দিয়ে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করে এই স্বীকৃতি, যা তাদের চোখে-মুখে এনে দেয় আনন্দ, গর্ব ও অনুপ্রেরণার দীপ্তি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন আলহাজ্ব মোঃ আবু তাহের।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ তরিকুল ইসলাম (মাস্টার), মাওঃ মোঃ মোশারফ হোসেন, মোঃ জাহিদ হাসান, মোঃ আবুল হোসেন এবং মোঃ আব্দুল কাদের জিলানী।
সভাপতিত্ব করেন মোঃ শাহিন আলম।
প্রতিটি অতিথির বক্তব্যে উঠে আসে তরুণদের প্রতি ভালোবাসা, ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, কবিতা, নাটক, অভিনয় ও কৌতুকের ছন্দে মুখর হয়ে ওঠে মঞ্চ।
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই লেখে, মঞ্চায়ন করে এবং অভিনয় করে একাধিক নাট্যাংশ ও কৌতুক পরিবেশনা। বিশেষ করে শিক্ষকের ভূমিকায় এক শিক্ষার্থীর অভিনয় ও সংলাপ দর্শকদের মাঝে হাসির রোল তোলে। অনুষ্ঠানের প্রতিটি অংশেই ছিল নান্দনিকতা ও প্রাণের ছোঁয়া।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক ও অভিভাবকেরা জানান, এমন উদ্যোগ বর্তমান সময়ের তরুণদের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা ও সামাজিক সচেতনতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আয়োজক দক্ষিণ সোনামতি ছাত্রকল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার খাতায় ভালো করুক তা নয়, তারা যেন মানুষ হয়, সমাজের আলো হয়ে ওঠে। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা তাদের পাশে থাকার বার্তা দিতে চাই।”

তবে অনুষ্ঠানের কিছু সীমাবদ্ধতাও চোখে পড়ে। মঞ্চস্থলের আশপাশে পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা ছিল না, কিছু দর্শককে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শব্দ ব্যবস্থাপনায়ও মাঝে মাঝে কিছু বিচ্যুতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে এসব খুঁটিনাটি দুর্বলতা ঢেকে দিয়েছে পুরো আয়োজনের প্রাণবন্ততা, সারল্য ও আন্তরিকতা।

সবশেষে বলা যায়, দক্ষিণ সোনামতি ছাত্রকল্যাণ পরিষদের এ আয়োজন ছিল কেবল একটি অনুষ্ঠানের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ছিল এক বিস্তৃত সামাজিক বার্তা—যেখানে শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি একত্রিত হয়ে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখিয়েছে।

মো. মিলন খান
হরিপুর উপজেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও
০১৮৩০৩০৩১৩১