ভুয়া পরিচয়, ভুয়া সনদ আর ব্ল্যাকমেইল’ শেখ তিতুমিরের প্রতারণার সাম্রাজ্য “

স্টাফ রিপোর্টার:মো: সেলিম রানা

কখনো দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধি, কখনো জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, আবার কখনো সচিবালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সহকারী, এভাবেই বছরের পর বছর নানা পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছে মানিকগঞ্জ জেলার হরিণামপুর উপজেলার পিপুলিয়া গ্রামের শেখ তিতুমির।
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সময় তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন দলটির প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করে তৈরি করেছেন ভুয়া পরিচয়ের সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। শুধু প্রতারণাই নয়, ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে মানুষের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্ল্যাকমেইল।

দেখতে সাধারণ হলেও প্রতারণার কৌশলে যেন মাস্টার্স ডিগ্রিধারী শেখ তিতুমির। নিজেকে পরিচয় দেন ‘জাতীয় অনলাইন প্রেস কাউন্সিল’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে। কখনো আবার দাবি করেন, তিনি সচিবালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী কিংবা সময় টেলিভিশন বা এটিএন-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
জানা যায়, শেখ তিতুমির নকল সনদপত্র তৈরি করে সহজ-সরল মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন এবং মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন। ফেসবুকে অসংখ্য ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ভিন্ন ভিন্ন নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে নানাভাবে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শুধু দেশেই নয়, প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কাছ থেকেও তিনি আদায় করেছেন লাখ লাখ টাকা। তিতুমিরের অন্যতম কৌশল হচ্ছে—নিজের নামে একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল খোলা। এসব পোর্টালের জন্য জাল সরকারি নিবন্ধনের সনদ তৈরি করে সহজ-সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রথমে আস্থা অর্জন করেন। এরপর ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কিংবা জাল দলিলপত্র দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে আদায় করেন মোটা অঙ্কের অর্থ। একের পর এক পরিচয় বদলে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার বানিয়ে শেখ তিতুমির গড়ে তুলেছেন এক ভয়ঙ্কর প্রতারণার সাম্রাজ্য।
অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে, শেখ তিতুমির প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে আস্থা অর্জন করেন। এরপর তার প্রভাবশালী পরিচয় দিয়ে সরকারিভাবে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন—কখনো সরকারি চাকরি, কখনো অনুদান, কখনো প্রেস কার্ড বা অনলাইন পত্রিকার নিয়োগপত্র।
শেখ তিতুমির তার প্রতারণার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন ফেসবুক। জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার লোগো ব্যবহার করে তৈরি করেছেন অসংখ্য ভুয়া প্রোফাইল। এসব প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভুয়া নিয়োগপত্র, সম্মাননা সনদ কিংবা বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন।
এছাড়াও, তার ভুয়া আইডিগুলো থেকে নিরীহ মানুষদের নামে মানহানিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে করে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে শেখ তিতুমীরের বিরুদ্ধে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যাল আদালতে মামলা করেছেন দৈনিক ক্রাইম তালাশ এর সম্পাদক ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক, মাহামুদুল কবির নয়ন।
ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যাল আদালতের বিচারক এ.এম জুলফিকার হায়াত এই মামলার পিটিশন গ্রহন করেন এবং ন্যায় বিচারে বিজ্ঞ আদালত আগামী ধার্য্য তারিখ মামলার আদেশ প্রদানের জন্য দিন ধার্য্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *