মাগুরায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদআলোচনা সভা ও লাল পতাকা মিছিল

“মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সমাজতন্ত্রের লড়াই বেগবান করার” আহ্বানে বাসদ এর ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ১০৭তম রুশ বিপ্লববার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে আজ ২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, সকাল ১১টায় সৈয়দ আতর আলী পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মাগুরা জেলা শাখার আহ্বায়ক প্রকৌশলী শম্পা বসুর সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শফিউর রহমান শফি। শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাসদের মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি এটিএম মহব্বত আলী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শিক্ষাবিদ কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ, সিপিবি মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি বীরেন বিশ্বাস, বাসদ ঝিনাইদহ জেলা শাখার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আসাদুল ইসলাম আসাদ। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ মাগুরা জেলা শাখার সদস্য সচিব ভবতোষ বিশ্বাস জয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গত জুলাই-আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে ১৫ বছরের দুঃশাসনের বিপরীতে একটা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও দুর্নীতির অবসান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো নিত্যপণ্যের বাজার উর্দ্ধমুখি। সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে আছে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ সব কিলিং বন্ধ হয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলের মতোই মজুরি চাইতে গিয়ে গুলি খেয়ে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে প্রান। অথচ ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শ্রমিকরা অকাতরে জীবন দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের ১০টি সংস্কার কমিটির এখনো তেমন কোন অগ্রগতি নেই। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার ক্ষেত্রে সরকার এখনো স্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছে না। ফলে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন দৃশ্যমান হয়নি। জনগণ ধোঁয়াসার মধ্যে রয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এই অঙ্গীকার বুকে ধারণ করে ৩০ লাখ মানুষের শহীদি আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের লাঞ্ছনার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলেও গত ৫২ বছরে শাসক গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ শাসন করায় মানুষের মুক্তি আসেনি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার-আলবদর পরাজিত হলেও গত ৫২ বছরের ধনীক বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিয়েছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা নিয়ে ১৯৯০ সালের সামরিক শাসনবিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধের অপূরিত স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য আবারো উর্ধে তুলে ধরেছে। অহেতুক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর মহামতি লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়াতে দুনিয়ার বুকে প্রথম শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ১৫ বছরের মধ্যে কমরেড স্তালিন দেখিয়েছিলেন কীভাবে সমাজ থেকে শোষণ, বেকারত্ব, ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তি দূর করা যায়। এই শিক্ষাকে ধারণ করে বিশ্বের দেশে দেশে মানুষ শোষণমুক্তির আশায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়ছে। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ও ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে বৈষম্যহীন সমাজ তথা সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণের সংগ্রামকে বেগবান করা ছাড়া মুক্তির আর কোন পথ নেই। তাই শুধু ক্ষমতার হাত বদল নয় ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য শ্রমিক কৃষকসহ আপামর মেহনতি জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা থেকে চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাণিজ্যকীকরণ বন্ধ করা, কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য ও শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, ব্যাটারি চালিত রিকশা উচ্ছেদ নয় আধুনিকায়ন করা, মাগুরায় কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা নির্মাণ,বেকারত্ব দূর, বন্ধ টেক্সটাইল মিল চালু করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *