ভেড়ামারায় মাটি ফেলে হিসনা নদী দখল করছে প্রভাবশালীরা, নেওয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ

মোহন আলী স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় মাটি ও বালু ফেলে হিসনা নদী দখল করছে প্রভাবশালীরা। তারা নদীর খাস জমিকে নিজেদের কেনা জমি দাবি করছেন। জমির দলিল আছে দাবি করেই নদীতে ফেলছেন  মাটি ও বালু। অনেকে আবার প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কাজ করার কথা স্বীকার করেছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের বাধাকে তোয়াক্কা করছেনা তারা। স্থানীয়রা বলছেন, ভেড়ামারার পরিবেশ রক্ষায় একমাত্র অবলম্বন এই হিসনা নদী। তাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দ্রুত দরকার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, হিসনা নদী ও এর শাখাসমূহ ভেড়ামারার পৌরসভাসহ ধরমপুর, জুনিয়াদহ, চাঁদগ্রাম,মোকারমপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে।এর মোট দৈর্ঘ্য ৫২ কিলোমিটার ও  প্রস্থ ৪২ মিটার(গড় ৩০ মি)।ভেড়ামারা অংশে নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫-২০ কি:মি: এবং এর শাখা নদীসহ আরো ২০  কি:মি:।

উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, হিসনা ব্রিজ পয়েন্ট থেকে কাঠেরপুলের শেষ সীমানা পর্যন্ত ১৩৬০,১৩৬২,১৩৫৩,১৩৪০-৪১,
১৩২৪-২৫,১৩১৮,১৩১৬ দাগগুলো নদীর ভিতরে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ১৩৫৩ দাগের রেকর্ড সালেহা খানমের নামে।জমিটি সালেহা খানমের থেকে ক্রয় করেন আমেরিকান দূতাবাসে কর্মরত আব্দুল গনি। বাকি দাগ গুলো নদীর খাস জমি। যা অন্যরা চাষাবাদ ও ভোগ দখল করছে। জানা গেছে, ১৯৫৬-৫৭ সালে অনেকেই “স্থায়ী বন্দোবস্ত”(পিআর) এর মাধ্যমে নদীর খাস জমি সরকারের থেকে লিজ নিয়ে ১৯৭৬ সালে আর. এস (রিভিশনাল সার্ভে) এর মাধ্যমে অনেকেই তা নিজ নামে রেকর্ড করে নেয়।

সরেজমিনে গিয়ে হিসনা ব্রিজের দক্ষিণ পার্শ্বের এই অংশে গিয়ে দেখা যায়,নদীর প্রস্থ মাত্র ১০ মিটার। এর একপাশে নদীর অংশ ভরাট করছেন আমেরিকান দূতাবাসে কর্মরত আব্দুল গনি অন্য পাশে ব্যবসায়ী রুবেল অটো। এলাকাবাসী জানিয়েছেন দুজনেই অত্যন্ত প্রভাবশালী। 

স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, এই নদী ভেড়ামারার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দখলদারদের কাছে ভেড়ামারাবাসি অসহায়।

আরেকজন বাসিন্দা বকুল শেখ বলেন, আমরা বারবার চেষ্টা করেও দখলবাজদের রুখতে পারি নাই।
অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় সবকিছুই ম্যানেজ করেন তারা।

স্থানীয় মেম্বার মোঃ সেলিম হোসেন জানিয়েছেন, আমেরিকান দূতাবাসে কর্মরত আব্দুল গনি, প্রায় ১০ বছর আগে নদীর এই জায়গাটি কিনে নেন। বিশাল এই জায়গাটি বকচর নামে পরিচিত।বর্তমানে তিনি নদীর এই জায়গাটি প্লট আকারে বিক্রি করছেন।

প্রবাসী মিলনের স্ত্রী পিংকি খাতুন জানান, তিনি গণির থেকেই নদীর ভেতরের ২ কাঠা জায়গা কিনেছেন। তার দাবি , তিনি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই মাটি ফেলছেন।

আমেরিকান দূতাবাসের কর্মরত আব্দুল গনি বলেন, এই জমি আমার কেনা সম্পত্তি। আমার সমস্ত কাগজপত্র সঠিক আছে। আমি বাড়িতে এসে আপনাদের দেখাবো।
ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, আমি আমার ক্রয়কৃত নিজস্ব জায়গাতেই মাটি ফেলেছি। আমি পৌরসভায় জমির সীমানা নির্ধারণের জন্য আবেদন করেছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান কালবেলাকে বলেন,আমরা হিসনা নদীতে নতুন করে মাটি ফেলে দখল করার বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে অবগত হলাম। নদীর ১ নং খাস খতিয়ানের জায়গা জেলা প্রশাসনের আওতাধীন। তিনি বললে, আমরা দ্রুত এর ব্যবস্থা নিতে পারি। নদীর ভেঙে যাওয়া বা চরপড়া জায়গা কেউই দখল করতে পারবে না, এটা নদী আইনে নিষিদ্ধ। অতিসম্প্রতি মহামান্য আদালত একটি রায়ে বলেছেন, নদীর পাড় থেকে ১০ মিটার বা ৩০ ফিট জায়গা ব্যক্তিগত হলেও সেটা কেউ দাবি করতে পারবে না।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি),আনোয়ার হোসাইন বলেন, হিসনা নদী ভরাট হচ্ছে শুনে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে কাজ বন্ধ করেছি।
এদেরকে শোকজ নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানিয়েছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করার প্রশ্নই আসেনা। গত ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি প্রশাসন নদীতে চলমান ৩টি কাজ  বন্ধ করে দিয়েছে। তাছাড়াও নদীর খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে  লিজ নিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় করার সুযোগ নেই। সরকারি বিধি মোতাবেক আর,এস নয় বরং সি,এস রেকর্ড অনুযায়ী নদী সংস্কার হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *