মাগুরায় চাকরি বিধি লংঘন করে দুই পদে শিশির

কামাল হোসেন,মাগুরা প্রতিনিধি:
সরকারি চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে একইসঙ্গে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার একজন কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ঐ শিক্ষকের নাম শিশির কুমার শিকদার। তিনি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গঙ্গা কপোতাক্ষ ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় -এর অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। একইসঙ্গে তিনি শ্রীপুর সেন্ট্রাল কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, যা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী এবং চাকরি বিধি ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে গণ্য। পদাধিকার বলে এই স্কুলটির সভাপতি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
চাকরিবিধির নিয়মে বলা হয়েছে, কোন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক একাধিক পদে/ চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। যদি এটা তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে সরকার তার এমপিও বাতিল সহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। অথচ ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রয়ারী থেকে ২২ বছর ধরে এই অভিযুক্ত শিশির কুমার সিকদার দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভাতা গ্রহণ করছেন যা সরকারি চাকরি বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংশ্লিষ্ট কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সভাপতি, শ্রীপুরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার এই বিষয়টি আমলে নিয়ে শিশির শিকদারকে অধ্যক্ষের পথ থেকে অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে সময় ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপির সুপারিশে তাকে আবার সে পদে বহাল করতে বাধ্য করা হয়। অদ্যবধি শিশির কুমার শিকদার শ্রীপুর সেন্ট্রাল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রীপুর সেন্ট্রাল কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের একজন শিক্ষক বলেন, শিশির কুমার সিকদার ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রয়ারী যোগদান করে অদ্যবধি অধক্ষ্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং বেতন ভাতাদি গ্রহন করছেন। এটি আইনসিদ্ধ নয়, সেটা আমরা আগে থেকেই জানি। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। এই শিক্ষক আরোও বলেন, ক্ষমতার দাপটে শিশির শিকদার স্কুলের অনেক শিক্ষকদের সাথে বিভিন্ন সময়ে বাজে আচরণ করে থাকেন।
মাগুরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, একই সাথে এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ও দায়িত্ব পালন করা আইন সিদ্ধ নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের তিনি ছিলেন জানের জান,প্রানের প্রান। তত সময়ে শ্রীপুরে তার অসীম দাপট। তার কথামত শিখর সব কাজ করতেন। শ্রীপুরের সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন ছিল তার হুকুমের দাস। তাইতো শ্রীপুরবাসী তাকে শিখরের উপদেষ্টা বা “দাদা” বলে মনে করতেন। শিশির শিকদারের বাড়ী শ্রীপুর উপজেলার জোঁকা গ্রামে। তিনি এমপির দাপটে ইউএনও,থানার ওসি বা এসিল্যান্ডকে পরিচালনা করতেন। শিশির শিকদার কমলাপুর জিকে আইডিয়াল ডিগ্রী কলেজে শিক্ষকতা করেন আর তার স্ত্রী শিখরের দাপট খাঁটিয়ে রাধানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা নিয়েছেন। শ্রীপুর উপজেলার সবাই জানে শিখরের ভার্সিটি দাদা শিশির শিকদার। শিশিরকে দাদা বলে ডাকতেন শিখর। রাজশাহী ভার্সিটির সম্পর্ক তাদের। এক সময় শিখরের দাপট দেখিয়ে শ্রীপুর উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হয়েছিলেন। উপজেলা নির্বাচনের পর শিশিরকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি হয়েছে। শিশির শিখরের ক্ষমতাবলে একই ব্যক্তি দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ সেন্ট্রাল কিন্ডার গার্টেন স্কুল থেকে ও জিকে আইডিয়াল কলেজ থেকে। কিন্ডার গার্টেন স্কুলে তিনি প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন।তারপরও অধ্যক্ষের বেতন খান।
শিখরের আমলে তিনি কলেজেও ঠিকমত যেতেন না।ক্লাসও নিতেন না। এক সময় শিশিরের দূর্নীতি ও একই ব্যক্তি দুইটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার দায়ে ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী তাকে চাকুরী থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। পরে শিখরের সুপারিশে আবার কিন্ডার গার্টেনে চাকুরী ফিরে পান।
প্রতিদিন কিন্ডার গার্টেন স্কুলে তিনি আসে না। মাঝে মধ্যে সকাল এসে আবার ৮ টার দিকে চলে যান। বেতন কিন্ত ঠিকই তুলে নেন। কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের ছাত্রছাত্রী ভর্তি ও বেতনের টাকা শিশির লুটেপুটে খাচ্ছেন। এই প্রতিষ্ঠানে আরেকজন বেকার যুবককে চাকুরী দিলে ওই ব্যক্তির পরিবারটি বাঁচতো, আবার বেকার সমস্যাও মিটতো। তখন ছিলেন শিখরের বড়ভাই এখন আবার বিএনপির সাথে আঁতাত করার চেষ্টা করছেন। ৫ তারিখের পর তিনি এলাকা ছাড়া ছিলেন। এখন আবার স্বদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।তার এই অসীম ক্ষমতা দেখে শ্রীপুরবাসী বিস্মিত! বিএনপি নেতারা নাকি তার কাছে বিক্রি হয়েগেছেন। তাইতো তিনি শিখরের আমলে শত প্রকার অন্যায়,অত্যাচার,জুলুম,নির্যাতন ও দাদাগিরি করেও রয়েছেন গণধোলাই ও গ্রেফতারমুক্ত।
শ্রীপুরবাসীর প্রশ্ন গডফাদার শিখরের এই দোসর কি তার অতীত কর্মের শাস্তি পাবে না?
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শ্রীপুর সেন্ট্রাল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সভাপতি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাখি ব্যানার্জি প্রতিবেদককে বলেন, আমি যোগদানের আগে থেকেই শিশির কুমার শিকদার দায়িত্ব পালন করে আসছে। তবে সে দুই প্রতিষ্ঠানে একসাথে চাকরি করতে পারবেন কিনা সেটা আমার জানা নেই এটা যেহেতু শিক্ষা অধিদপ্তরের ব্যাপার একটু খোঁজ খবর নিয়ে আপনাকে জানাতে পারবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *