মহামান্বিত পবিত্র রজনী লাইলাতুল কদর রাতের তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলত

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার- জাহারুল ইসলাম জীবন

ইসলামের ইতিহাসে লাইলাতুল কদর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। এই রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম এবং এই রাতে আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাজিল করেছেন। লাইলাতুল কদর রহমত, বরকত ও ক্ষমার রাত। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য অগণিত রহমতের দরজা খুলে দেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করে দেন।
কোরআনের আলোকে লাইলাতুল কদর রাতের ফজিলতঃ কোরআনে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে একটি সূরা নাজিল হয়েছে, যার নাম সূরা আল-কদর। এই সূরার প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে।” (সূরা আল-কদর, আয়াত: ১)
এই সূরার অন্যান্য আয়াতে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এই রাতে ফেরেশতা ও রুহকে (জিবরাঈল আ.) পৃথিবীতে প্রেরণ করেন এবং এই রাতটি শান্তি ও নিরাপত্তার রাত।
হাদিসের আলোকে লাইলাতুল কদর রাতের ফজিলতঃ হাদিসে লাইলাতুল কদরের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।” (বুখারি ও মুসলিম)
আধ্যাত্মবাদ ও তাসাউফের আলোকে লাইলাতুল কদর রাতের ফজিলতঃ আধ্যাত্মবাদ ও তাসাউফের দৃষ্টিতে লাইলাতুল কদর হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ। এই রাতে বান্দা আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারে।
তাসাউফের সাধকরা লাইলাতুল কদরের রাতে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারা এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন।
লাইলাতুল কদর রাতের মহত্বতাপূর্ণ তাৎপর্যঃ এই রাতটি কোরআন নাজিলের রাত, যা মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় নিয়ামত।
**এই রাতে ইবাদত করা হাজার মাস ইবাদতের চেয়ে উত্তম, যা বান্দার জন্য এক বিশাল সুযোগ।
**এই রাতে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা অগণিত, যা বান্দার গুনাহ মাফের কারণ হতে পারে।
**এই রাতটি আধ্যাত্মিক উন্নতির বিশেষ সুযোগ, যা বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে।
লাইলাতুল কদর রাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহঃ
**কোরআন তেলাওয়াত করা।
**নফল নামাজ আদায় করা।
**জিকির ও দোয়া করা।
**দান-সদকা করা।
**গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া।
**আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
সর্বোপরি, এই মহামান্বিত রজনী লাইলাতুল কদরের রাত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য এক বিশেষ রহমতের রাত। এই রাতে বান্দা সকল আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারে। তাই আমাদের উচিৎ এই রাতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বেশি বেশি ইবাদত করা এবং গুনাহ্ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা সহকারে হৃদয়ের আকুতি ও অশ্রুসিক্ত নয়নে কন্দনরত অবস্থায় বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *