
নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের বিম থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছে সহকারী শিক্ষক রেহানা পারভীন সুমি সহ তার শিশু সন্তান । বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল ) সকালে উপজেলার ঝুনাগাছচাপানী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত সহকারী শিক্ষক ও তার শিশু সন্তানকে ততক্ষণে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।ঘটনার পর ওই স্কুলের প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়। আতংকিত হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরেনি। ঘটনার পর থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমি।এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অফিস কক্ষ থেকে ক্লাস রুমে যাওয়া প্রস্তুতির সময়। এমন সময় ছাদের বিম ধসে পড়ে বিকট শব্দ হয়। বালু-সুরকি মাথায় ও চোখে পড়ে সহকারী শিক্ষক রেহানা পারভীন সুমি সহ তার শিশু সন্তান আহত হয়েছে। আমরা ততক্ষণে তাকে উদ্ধার করে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি জন্য পাঠিয়ে দেই।তারা সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারীরিক অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রেফার্ড করেন । তবে তার শিশু সন্তান সুস্থ আছে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে ক্লাসের শিশু শিক্ষার্থীরা আতংকিত হয়ে পড়েছে।
প্রধান শিক্ষক আক্ষেপ করে আরও বলেন, ১৯৯৫ সালে অফিস রুমসহ চার কক্ষের এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়। তিনটিতে শ্রেণির ক্লাস এবং আরেকটিতে বিদ্যালয়ের অফিস রুমের কাজ চালিয়ে আসছি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকির মধ্যে এ ভবনটি আমাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে। ছাদের ফাটলসহ চরম ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে অনেক আগেই আমি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মোশাররফ হোসেন ও আদুরী বেগম বলেন- অনেকদিন ধরেই পলেস্তারা খসে পড়তো। কিন্তু কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। এভাবে হঠাৎ বিম ভেঙে পড়ায় ওই স্কুলে আর কোনো পড়াশোনার পরিবেশ নেই। আল্লাহ শিক্ষককে বড় রকমের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আজকে বড় রকমের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারতো। নতুন করে স্কুলের ভবন নির্মাণ না করা পর্যন্ত স্কুলে আর বাচ্চাদের পাঠাব না।
সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন জানায়- আগ থেকেই কমবেশি পলেস্তারা ভেঙে পড়ত। বৃহস্পতিবার অফিস কক্ষে হঠাৎ বিমের অনেক স্থানের পলেস্তারা ধসে পড়ে বিকট শব্দ হয়। এতে সহকারী শিক্ষকে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়।
এদেখে শিক্ষার্থীরা ভয়ে আতংকিত হয়ে ছুটাছুটি শুরু করে। নতুন ভবন নির্মাণ না করা পর্যন্ত আর ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করবে না বলেও জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এ দিকে ঘটনার পর স্কুলটি পরিদর্শন করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্র গাছি, এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বীরেন্দ্র নাথ রায়, সহকারী শিক্ষক অফিস ফিরোজুল আলম,ওমর ফারুক, ভেন্ডাবাড়ী সরঃপ্রাঃবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ডাবলু, বিন্যাকুড়ি সরঃপ্রাঃ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মামনুর রশিদ, সোনাখুলী সরঃপ্রাঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ প্রমুখ।এসময়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, কিন্তু ভবনটি এত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায়নি। আমি ভবনটির দুটি কক্ষই তালা মেরে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। প্রধান শিক্ষককে লিখিত আবেদন করার জন্য বলেছি।আমরা খুব শিগগিরই ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে আবেদন করব।