
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার- জাহারুল ইসলাম জীবন
বাস্তবতার কঠিন জমিনে দাঁড়িয়ে আজ মানবজাতি এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। আমাদের চারপাশের ঘটনাবলী যেন এক ভয়াবহ চিত্রনাট্য, যেখানে প্রতিনিয়ত মঞ্চস্থ হচ্ছে ধ্বংস আর অস্থিরতার কালো মেঘ। যুদ্ধ, বিরহ, হানাহানি আজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এক বিষাক্ত বাতাস। রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন এক স্থায়ী রোগ, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হচ্ছে। হত্যা আর গুমের আতঙ্ক মানুষের মনে স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষত ধর্ষণ, সমাজের কদর্য রূপ উন্মোচন করে।
আধুনিকতার নামে আমরা প্রতিনিয়ত মেতে উঠেছি ধ্বংসযজ্ঞে। আণবিক বোমা থেকে শুরু করে মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্রের বিস্তার, দাহ্য পদার্থের নির্বিচারে ব্যবহার – এই সবই যেন আমাদের আত্মহননের প্রস্তুতি। পরিবেশ দূষণ এক নীরব ঘাতক হিসেবে ক্রমশ গ্রাস করছে আমাদের গ্রহকে। কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, প্লাস্টিকের স্তূপ, বনভূমি ধ্বংস – প্রকৃতির প্রতি আমাদের নির্দয় আচরণ আজ স্পষ্ট।
সামাজিক অস্থিরতা যেন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। মানুষের প্রতি মানুষের ন্যূনতম নৈতিক বা মানবিক মূল্যবোধের অভাব প্রকট। নিঃস্বার্থতা আজ যেন এক দুর্লভ শব্দ। পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিদ্বেষ আর স্বার্থপরতা সামাজিক বন্ধনকে দুর্বল করে দিয়েছে। আত্মীয়তার বন্ধন আজ ফিকে হয়ে আসছে, বন্ধুত্বের উষ্ণতা হ্রাস পাচ্ছে। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি আমাদের বিরূপ আচরণ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনছে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ – বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, দাবানল – যেন আমাদের কৃতকর্মের ফল।
এই মানবজাতি আধুনিকতার মোহে অন্ধ হয়ে, ক্ষমতা আর নিজস্ব স্বার্থের লোভে প্রতিনিয়ত ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। প্রকৃতি আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। পৃথিবীর বুকে শান্তি, কল্যাণ, আদর্শ আর সম্মান যেন ক্রমশ বিলীন হতে চলেছে। ‘যার যেমন ইচ্ছা, সে তেমন করে’ – এই নীতি আজ সমাজের রোজনামচা। পাপকে আজ আর কেউ পরোয়া করে না, অন্যায় আচরণকে অন্যায় বা জুলুম বলে গণ্য করা হয় না।
পৃথিবীর ধারণকৃত সৌন্দর্য আর প্রকৃত পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। মনুষ্যত্ব আর আত্মবিবেক যেন নির্বাসিত। ধর্মের দোহাই দিয়ে সকলে ব্যস্ত নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির পথে। এক কথায়, মানবজাতি আজ তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে পৃথিবীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সামাজিক বন্ধন, আত্মীয়তার সম্পর্ক, দেশাত্মবোধ, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার মানসিকতা – সবকিছুতেই আজ গভীর অবক্ষয়। চরিত্রগত দূষণীয় নানামুখী কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ পৃথিবী আজ মানবজাতির অপকর্মের বোঝা বইতে বাধ্য হচ্ছে।
ধর্মীয় আচার-অনাচারের নামে চলছে বাড়াবাড়ি। প্রত্যেকে নিজ নিজ মতবাদ আর ব্যক্তিগত স্বার্থের মোহে মত্ত। এই মাতাল নগরীর সকলেই যেন দিকভ্রান্ত। আধুনিকতা আর ডিজিটালের নামে মানুষ ধ্বংস করছে আল্লাহর সৃষ্টি – প্রাকৃতিক সম্পদ, ভূ-সম্পদ, সামুদ্রিক সম্পদ এবং আবহাওয়ার অমূল্য ভান্ডার। আমরা নিজেরাই নিজেদের হাতে প্রকৃতিকে হত্যা করছি, আর প্রকৃতিও তার ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে একের পর এক ধ্বংসাত্মক রূপে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, দাবানল, জলোচ্ছ্বাস – একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হচ্ছে বিশ্ববাসী। সত্যই যেন আজ মানবজাতির হাতেই পৃথিবী ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।