ঠাকুরগাঁওয়ে পীরগঞ্জের নাককাটি ঠাকুরের পুকুরে বিয়ের আগে ভিড় বাড়ে এই ‘মিরাকল’ মানুষের ভিড়

মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মিলনপুর গ্রামে বসেছে ২০০ বছরের পুরোনো নাককাটি মেলা। বৈশাখের তৃতীয় ৩ মে শনিবার দিনভর চলে এই লোকজ উৎসব। আয়োজন ঘিরে ছিল হাজারো মানুষের ঢল, নানা পণ্যের বিপণি আর ছিল সেই বিশ্বাসের পুকুর; যার জল ছুঁয়ে মানুষ স্বস্তি খোঁজেন শরীর ও মনের। স্থানীয় শ্রীশ্রী শ্যামসুন্দর গৌড়ীয় মঠ-লস্করা টুপুলীর উদ্যোগে এই বছর ২০০তমবারের মতো মেলার আয়োজন হয়। আয়োজকদের দাবি, একসময় এটি ছিল কেবল ধর্মীয় পূজার আয়োজন। সময়ের সঙ্গে তা রূপ নিয়েছে বৃহৎ লোক উৎসবে।
এই মেলার কেন্দ্রবিন্দু এক প্রাচীন পুকুর, যাকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন ‘নাককাটি ঠাকুরের পুকুর’। জনশ্রুতি আছে, এই পুকুরের পানি শরীরে মাখলে রোগবালাই দূর হয়, মানত করলে পূর্ণ হয় বাসনা। অনেক তরুণ-তরুণী বিয়ের আগে এখানে এসে মানত করেন, কেউ বিশ্বাস করেন, বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাব ও গয়না পেয়ে থাকেন। মেলা ঘিরে বসে দুই শতাধিক দোকান। মাটির খেলনা, বাঁশ-বেতের জিনিস, হস্তশিল্প, পোশাক, গয়না, কসমেটিকস, ঘরোয়া পণ্য—সবই মেলে এখানে। ছিল ২০টির বেশি খাবারের স্টল। শিশুদের আনন্দের জন্য ছিল নাগরদোলা, হানি সিংসহ একাধিক রাইড। মেলায় অংশ নিতে ঠাকুরগাঁও ছাড়াও পঞ্চগড়, নীলফামারী, সৈয়দপুর ও বীরগঞ্জ থেকেও এসেছেন দর্শনার্থীরা। পুকুরের ‘পবিত্র’ জলে ভরসা রেখেছেন অনেকে। পঞ্চগড় থেকে আসা শ্রাবণী রানী বলেন, ‘তিন বছর আগে ছেলের অসুস্থতার সময় এই পুকুরের জল দিয়ে ওর মাথা-মুখ ধুইয়ে দিই। এরপর ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। এবার এসেছি কৃতজ্ঞতা জানাতে। আমার বিশ্বাস, এই জলে সত্যিই শুদ্ধির ক্ষমতা আছে।’ সৈয়দপুরের মিতালী রায় বলেন, ‘বিয়ের আগে অনেক টানাপোড়েন ছিল। আসবাব, গয়না—কিছুই ঠিকঠাক ছিল না। এখানে এসে মানত করেছিলাম। অদ্ভুতভাবে পরে সবকিছুই ঠিক হয়ে যায়। এবার আবার এসেছি নতুন করে মানত করতে। মনে শান্তি পাই।’বীরগঞ্জের নেন্দুলা রায় বলেন, ‘প্রতিবছর একবার হলেও এই মেলায় আসি। পুকুরের জল শরীরে মাখলেই একধরনের প্রশান্তি অনুভব করি। শরীরের পুরোনো ব্যথাগুলো যেন হালকা হয়ে আসে। অনেকে অবিশ্বাস করলেও আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এই পানিতে আলাদা শক্তি আছে।’
মেলায় আসা মালতী রানী বললেন, ‘এই মেলায় ভালো জিনিস পাওয়া যায়, দামও কম। প্রতিবছর আসি।’
গড়েয়া এলাকার শ্রাবণী বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে অনেক আত্মীয়স্বজন আগে থেকে আমাদের বাড়িতে এসেছেন। সবাই মিলে এসেছি মেলায়।’ স্থানীয় মিলনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘নাককাটি মেলা শুধু একটি লোকজ উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই আয়োজন মানুষকে যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *