ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া জুটমিল ঐতিহ্যবাহী পরিত্যক্ত ধ্বংস অবস্থায় স্থাপনটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে

মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,

ঠাকুরগাঁওয়ে এক সময় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা রুহিয়া জুট মিল এখন শুধুই এক নিঃশব্দ স্মৃতি। শ্রমিকের কোলাহল, কলকারখানার গর্জন আর উৎপাদনের ব্যস্ততা এক সময় যে মিলটিকে প্রাণচঞ্চল করে তুলেছিল, তা আজ পরিত্যক্ত ও ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় পড়ে আছে। বিলুপ্তপ্রায় এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও, নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা কার্যক্রম। রুহিয়া বাজারের অদূরে অবস্থিত এই জুট মিলটি এক সময় এ অঞ্চলের শত শত শ্রমিকের কর্মসংস্থানের মাধ্যম এবং পাট চাষীদের স্বপ্ন ছিল। শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, আশপাশের জেলা থেকেও মানুষ এখানে কাজ করতে আসত। দেশজুড়ে পাটের চাহিদা থাকায় মিলটি নিয়মিত উৎপাদন করে আসছিল পাটজাত পণ্য। এতে সরকার যেমন রাজস্ব পেত, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিও ছিল চাঙ্গা। তবে সময়ের সাথে সাথে সরকারি-বেসরকারি অব্যবস্থাপনা, আধুনিকায়নের অভাব এবং বৈশ্বিক বাজারে পাটজাত পণ্যের প্রতিযোগিতা হ্রাস পাওয়ায় মিলটি ধীরে ধীরে কার্যক্রম হারাতে থাকে। একসময় মিলটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মিলের অবকাঠামো জরাজীর্ণ, যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে, এবং এলাকা পরিণত হয়েছে ঝোঁপ-ঝাড়ে ঢাকা এক পরিত্যক্ত স্থানে। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, “ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে এ মিলের গেটে যেতাম। কত মানুষের কাজ ছিল এখানে! এখন তা কেবল স্মৃতির পাতায়।” অন্য একজন সাবেক শ্রমিক বাবুল ইসলাম বলেন, “আমরা বহু বছর কাজ করেছি এই মিলেতে। হঠাৎ একদিন বন্ধ হয়ে গেল। এরপর আর কেউ খবর নেয়নি। মোঃ সাইফুল্লাহ বলেন, রুহিয়া জুট মিলটি এ এলাকার ইতিহাস ঐতিহ্যর ধারক ও বাহক। কিন্তু জুট মিলের জমি দখল করে এখানে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা, মার্কেট, কিন্ডার গার্ডেন। এছাড়া মিলটি বর্তমানে ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে। কলেজ ছাত্র মুন্না বলেন, রুহিয়া জুট মিল মাদক সেবিদের অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে। পাট চাষী আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার আমি ৮০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট কারখানা বন্ধ হওয়ার পর থেকে দেখতেছি পাট চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে চাষীরা। এলাকাবাসীর দাবি, রুহিয়া জুট মিল পুনরায় চালু না হলেও, এটি যেন ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত থাকে। প্রয়োজনে এটিকে পর্যটন কেন্দ্র, পাট গবেষণা কেন্দ্র, অথবা কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করা যেতে পারে। ঠাকুরগাঁও জেলা পাট পরিদর্শক অবিনাশ চন্দ্র রায় বলেন, রুহিয়া জুট মিল বিজেএমসি এর অধিনস্ত একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল। এটি আমাদের অধিনে নয়। এটি দেখাশোনার জন্য রংপুরে একজন প্রতিনিধি রয়েছে। আপনারা তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের কে বলেন, আপনারা শুধু ফোনে যোগাযোগ করলেই হবে না। আপনারা আমার ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে বসেন। উনাকে বলেন, উনি সহ আমার সঙ্গে বসেন। তাহলে সেখানে অন্যকিছু প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আমি বিবেচনা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *