
আবু হানিফ পাকুন্দিয়া
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় মোগল বাদশাহ আওরঙ্গজেব মসজিদটি অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এটি উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের শালংকা গ্রামে অবস্থিত। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে থাকা স্বতেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সাড়ে চার শতাধিক বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক মসজিদটি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়রা এর দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন।মসজিদটির নির্মাতা সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বাদশাহ আওরঙ্গজেবের রাজ দরবারে শেখ মোহাম্মদ হানিফ নামে একজন জ্ঞানী মোহাদ্দেস ছিলেন। তিনি বাদশাহ আওরঙ্গজেবের দরবারে হাদিস বর্ণনাসহ ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতেন। দীর্ঘকাল দক্ষতার সঙ্গে কাজ করায় বাদশাহ খুশি হয়ে শেখ মোহাম্মদ হানিফকে ৬২ শতাংশ জমি দান করেন। ধারনা করা হয়, তিনি ১৬৬৫ সালে দিল্লি থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই শালংকা গ্রামে এসে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৬৬৯ সালে তিনি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। বাদশাহ আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মসজিদটি নির্মাণ করায় আওরঙ্গজেবের নাম অনুসারেই মসজিদটির নামকরণ করা হয়। ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই মসজিদটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নত্তাত্ত্বিক স্থাপনা।স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চুন-সুরকি ও লাল ইটের মিশ্রণে নির্মিত এই এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি। বর্গাকৃতির এই মসজিদটি চারটি পিলারের ওপর নির্মিত। চার কোনায় চারটি পিলারের ওপর চারটি কলস ছিল। মূল গম্বুজটির চারপাশে চমৎকার কারুকার্য ও পদ্মফুলের পাপড়ির ন্যায় গঠনশৈলী ছিল। গম্বুজটির ওপরের অংশটি উল্টানো পদ্মফুলের ন্যায় ছিল। মসজিদটির দেওয়ালে লতাপাতা ও ফুলের ন্যায় চমৎকার কারুকার্যে তার নৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলা হয়েছিল। যা প্রমাণ করে মোগল স্থাপত্য কলার আদলে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এই কারুকার্যগুলো এখন আর নেই, নষ্ট হয়ে গেছে। মসজিদের পূর্ব পাশের দেওয়ালে তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। যার মধ্যে মাঝখানের প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির। উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দেওয়ালেও একটি করে মোট দুইটি প্রবেশ পথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশ দ্বারের ওপরে শ্বেত পাথরে ফার্সি ভাষায় খোদাই করে বিস্ময়কর দোয়া লেখা ছিল।
স্থানীয় রুস্তম আলী (৬৫) ও জামাল (৭০) বলেন, অবহেলা আর তদারকির অভাবে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি দিন দিন ক্ষয় হয়ে পড়ছে। ইট ও পলেস্তারা খসে পড়ছে। কখন যে এটি ভেঙ্গে পড়ে যায় এই আশংকাই করছি আমরা। আমরা এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটিকে দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
নারান্দী ইউনিয়ন বাসিন্দা মোঃ ইসমাইল বলেন, মসজিদটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। এটি আমাদের সম্পদ, দেশের সম্পদ। প্রত্নত্তাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এটি সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর ইতিহাস জানতে পারে।প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, এবছর সংস্কার করা সম্ভব নয়। কারন এ বিষয়ের ওপর কোন বাজেট নেই। আগামী বছর সরেজমিনে গিয়ে দেখে এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।