ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভাজন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে জটিলতা

মোঃ মকবুলার রহমান
স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে একমত হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জোরালোভাবে ডিসেম্বরেই নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। দলটির মতে, দেশের বড় একটি রাজনৈতিক শক্তি তাদের সঙ্গে রয়েছে এবং জনগণের প্রত্যাশাও তৎকালীন নির্বাচন নিয়েই। এক বিএনপি নেতা মানবজমিনকে বলেন, “আমরাও ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সমর্থন করি, কিন্তু আমরা জোর দাবি তুলিনি। বিএনপি তুলেছে।”

গত শনিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি এবং এনসিপি। বৈঠকে রোডম্যাপ ঘোষণার প্রত্যাশা থাকলেও, তেমন কোনো ঘোষণা না আসায় হতাশা প্রকাশ করে বিএনপি। রোববার আরও ১৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রধান উপদেষ্টা। বিশ্লেষকদের আশা ছিল, এতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার মিল নেই। প্রায় সব দলই ডিসেম্বরের নির্বাচন চায়। তা হলে কেন জুন পর্যন্ত সময় টানতে হবে, তার ব্যাখ্যা নেই।”

গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, “প্রত্যেক দল চায় সংস্কার ও বিচার শেষে দ্রুত নির্বাচন। সরকারই বলেছে, ডিসেম্বর থেকে জুনে নেয়া হবে। তাহলে এখন ব্যাখ্যা তাদেরই দিতে হবে।”

ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা গাজী আতাউর রহমান মনে করেন, নির্বাচন যেনতেনভাবে হলে চলবে না। “স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্ত বৃথা যাবে না – এই দায়িত্ব সরকারের। তাই মৌলিক সংস্কার শেষ করে তবেই নির্বাচন হওয়া উচিত।”

হেফাজতে ইসলামের মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, কিছু দল রমজানের পর নির্বাচনের কথা বললেও, সবাই চায় দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা। “আগে হলেও ভালো, পরে হলেও সমস্যা নেই – তবে সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবে হওয়া জরুরি।”

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, “আমরা সময় নির্দিষ্ট করে নয়, পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে রোডম্যাপ চাই। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব হলে সেটিই উচিত।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে অনিশ্চয়তা বাড়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার দূরত্বও আরও প্রকট হতে পারে। এতে করে দেশজুড়ে অস্থিরতা ফের চরমে উঠার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *