এক কিলোমিটার রাস্তায় থমকে আছে জীবন, মেদিনী সাগরে চলছে নিঃশব্দ দুর্ভোগ

হরিপুর উপজেলা প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ১ নম্বর গেদুরা ইউনিয়নের মেদিনী সাগর গ্রামের প্রধান কাঁচা রাস্তাটি যেন এলাকাবাসীর জন্য এক স্থায়ী দুর্ভোগের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রাস্তাটি বছরের পর বছর ধরে কেবল কাদা পানি আর ভাঙাচোরা গর্তের সঙ্গেই পরিচিত।
বর্ষা মৌসুম এলেই এই রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।হাঁটু সমান কাদার স্তর পার হওয়া যেন গ্রামের মানুষের নিত্যকার যুদ্ধ।তবে দুর্ভোগ শুধু বর্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।শুকনো সময়েও রাস্তার ভাঙাচোরা অংশগুলো চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।গর্ত উঁচু-নিচু অংশ আর ধুলার ঝড় মিলিয়ে এটি যেন গ্রামের মানুষের নিত্য সঙ্গী এক অসহনীয় সমস্যা।
এই মুহূর্তে মেদিনী সাগরে চলছে ভুট্টা ও ধান কাটার মৌসুম।কৃষকেরা মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে পড়ছেন চরম বিপাকে।কাঁচা রাস্তার কাদার কারণে কোনো যানবাহন গ্রামের ভিতরে ঢুকতে পারছে না।ফলে ভ্যান অটো সিএনজি চার্জার গাড়ি—সব থেমে যাচ্ছে মাঝপথে।অনেক সময় কৃষকদের নিজেদের কাঁধে করেই ফসল টেনে আনতে হচ্ছে।
একজন কৃষক বলেন
“ফসল তো উঠছে কিন্তু কাদার কারণে কোনো গাড়ি আসে না।কখনো নিজেই কাঁধে করে আনতে হয় আবার কখনো দিনের পর দিন মাঠেই পড়ে থাকে ধান বা ভুট্টা।”
এতে একদিকে যেমন বাড়ছে শারীরিক কষ্ট অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে।ফসল ভিজে যাচ্ছে নষ্ট হচ্ছে—ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকেরা।বিক্রি করতে না পারায় অনেক ক্ষেত্রেই লাভের মুখ না দেখে লোকসানের বোঝা বইতে হচ্ছে।
এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায় শিশুরা বাজারে যায় সাধারণ মানুষ রোগী নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে।কিন্তু কাদা ও ভাঙা রাস্তার কারণে এসব যাতায়াত একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে।একটি রিকশা বা অ্যাম্বুলেন্সও সেখানে প্রবেশ করতে পারে না বলে জানান এলাকাবাসী।
একজন নারী বলেন
“স্কুলে যাওয়ার সময় বাচ্চারা কাদায় পড়ে যায়।কাপড়চোপড় ভিজে যায়।কেউ অসুস্থ হলে নিয়ে যেতে পারি না ঠিকমতো।অনেক সময় ঘরেই বসে থাকতে হয়।”
স্কুলপড়ুয়া শিশুদের বাবা-মা জানান এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন সন্তানদের স্কুলে পাঠানো মানেই একটা যুদ্ধ।বৃষ্টির দিনে স্কুলে পাঠানোই যায় না।শুকনো দিনে মাটি শুকিয়ে ফাটল ধরে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন
“এই রাস্তা যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।আমরা চাই না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই একই দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যাক।”
মেদিনী সাগরের এক কিলোমিটার এই কাঁচা রাস্তাটি যেন আজ গ্রামের প্রাণচক্রকেই স্তব্ধ করে দিচ্ছে।বছরের পর বছর কেবল দুর্ভোগ কিন্তু কোনো স্থায়ী উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি এলাকাবাসী।প্রতিশ্রুতি এসেছে বহুবার কিন্তু বাস্তবতা বদলায়নি।
এলাকাবাসীর দাবি এই রাস্তাটি যদি পাকা করা যেতো বা অন্তত কাদা দূর করে চলাচলের উপযুক্ত রাখা যেতো তবে ভুট্টা ও ধানের মৌসুমে কৃষকেরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারতেন সময়মতো।শিশুদের স্কুল যাত্রাও হতো নিরাপদ আর অসুস্থ মানুষদের জন্য যাতায়াত নিশ্চিত করা যেতো দ্রুত।
রাস্তাটি মেরামত হলে শুধুমাত্র চলাচলই নয় মেদিনী সাগরের অর্থনীতিও সচল হতো।ফসল পরিবহন হতো দ্রুত বাজারজাত হতো ঠিক সময়ে।দিনমজুররা পেতেন কাজ মালবাহী যানবাহন চালকরা পেতেন উপার্জনের সুযোগ।
মেদিনী সাগরের এই কাঁচা রাস্তাটি আজ যেন এক নিঃশব্দ বেদনার নাম যা জানে কেবল ভুক্তভোগীরাই।আশার কথা হলো এলাকার মানুষ এখন আর নীরব নয়।তারা চায় পরিবর্তন তারা চায় চলাচলের নিরাপদ পথ তারা চায় উন্নয়নের হাত তাদের জীবনযাত্রাকে ছুঁয়ে যাক।
তাই প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এলাকাবাসীর একটাই অনুরোধ—মেদিনী সাগরের এই কাঁচা রাস্তাটিকে যেন আর অবহেলার প্রতীক না করে তোলা হয়।এই একটি রাস্তা বদলে দিতে পারে একটি গ্রামের ভবিষ্যৎ।

মোঃ মিলন খান
হরিপুর উপজেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও।
০১৮৩০৩০৩১৩১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *