
হরিপুর উপজেলা প্রতিনিধি:
রানী শিকল উপজেলা কাটিহার বাজার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রাণবন্ত জনপদ ঠাকুরগাঁও জেলার রানী শিকল উপজেলা আর সেই উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কাটিহার বাজার কেবল একটি বাজার নয় বরং ঈদুল আজহার আগমনী বার্তায় মুখরিত হয়ে ওঠা মানুষের আনন্দ বেদনা স্বপ্ন ও আশা আকাঙ্ক্ষার এক বিশাল কেন্দ্র আজ সেই বাজারে চলছে কুরবানির গরু কেনাবেচার ব্যস্ততা ভিড় জমেছে ক্রেতা বিক্রেতা ও কৌতূহলী দর্শনার্থীতে
কাটিহার বাজার অনেক পুরনো কিন্তু কুরবানির সময় এই বাজার যেন রূপ নেয় এক উৎসবে দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু এই বাজারে নিয়ে আসছেন খামারিরা কেউ এসেছেন নাটোর থেকে কেউ দিনাজপুর কেউ আবার হাওরের পাড় থেকে গরুগুলো একেকটা যেন চলমান শিল্পকর্ম কেউ রঙিন কেউ সবজে কেউ আবার ধবধবে সাদা একেকটা দেখে মনে হয় যেন ছবির ফ্রেম থেকে উঠে এসেছে।
বাজারে দেখা গেলো সকাল থেকেই মানুষের ঢল একপাশে গরুর সারি আর অন্যপাশে দামাদামি দরদাম সব মিলিয়ে এক সরগরম পরিবেশ কেউ এসে নিজের সাধ্যের মধ্যে একটা ছোট গরু খুঁজছেন কেউ আবার কিনছেন একাধিক বড় গরু বাজারে কথা হলো এক প্রবীণ খামারির সাথে যিনি বললেন আমি ৭ মাস ধরে এই গরুটা লালন পালন করেছি এখন বিক্রি করতে পেরে মনটা কেমন যেন খালি হয়ে গেল
কাটিহার বাজারে এবার সবচেয়ে আলোচনায় আছে বিশাল আকৃতির কয়েকটি গরু যেগুলোর নামও রাখা হয়েছে কেউ রেখেছেন সুলতান কেউ বাদশাহ কেউ আবার রাজার হাট এসব নাম শুনে কৌতূহল বেড়ে যায় দর্শনার্থীদের সবাই ছুটে যায় গরুগুলো এক নজর দেখতে আর ছবি তুলতে এসব গরু দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি স্বাস্থ্যও ভালো খামারিরা বলছেন কোনো প্রকার হরমোন নয় একেবারে প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়েই বড় করা হয়েছে এসব পশু
গরু কেনাবেচার পাশাপাশি বাজারে বসেছে নানা পণ্যের দোকান ঘুঁটি কাপড় খাবার ফলমূল শিশুদের খেলনা সব মিলিয়ে একটি বড় মেলা যেন বসে গেছে এখানে ছোট ছোট বাচ্চারা বাবার হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে মায়েরা গরুর পাশে দাঁড়িয়ে দাম যাচাই করছেন এই চিত্র দেখে সহজেই বোঝা যায় কাটিহার বাজার কেবল ব্যবসার জায়গা নয় এটি মানুষের সম্পর্ক অনুভব আর উৎসবের ছোঁয়া
ক্রেতারা বলছেন এই বাজারে দাম তুলনামূলক কম গরুর স্বাস্থ্য ভালো তাই অনেকেই দূর দূরান্ত থেকে এসে এই বাজারকে পছন্দ করেন যাদের কথা শুনলে বোঝা যায় তাদের একটাই চাওয়া যেন পরিবারে একটিবারের জন্য হলেও ভালো একটা কুরবানি দিতে পারেন অনেকেই বলছেন এবার আর ঢাকার গরু কেনা লাগবে না কাটিহার বাজারেই সব পাওয়া যাচ্ছে
বাজার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয় সিসি ক্যামেরা ও স্বেচ্ছাসেবক দল মাঠে রয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে পশু ডাক্তার দিয়ে জাল নোট শনাক্ত করার মেশিন বসানো হয়েছে এবং যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন
প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে জানা গেছে রানী শিকল উপজেলায় কুরবানির জন্য পর্যাপ্ত গবাদিপশু রয়েছে এবার কাটিহার বাজারে যে পরিমাণ গরু এসেছে তা অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি একারণেই এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় কুরবানির পশুর বাজার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে
সব মিলিয়ে কাটিহার বাজার এখন শুধু ঠাকুরগাঁও নয় আশেপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে আসা মানুষের কাছে এক নির্ভরতার নাম এখানে শুধু গরু কেনা বেচা হয় না এখানে বিক্রি হয় শ্রমিকের ঘামে গড়া স্বপ্ন খামারির মমতায় বেড়ে ওঠা জীবন আর সাধারণ মানুষের কুরবানির অনুভূতি
এ বাজারের প্রাণচাঞ্চল্য প্রাণিসম্পদের স্বস্তি প্রশাসনের তৎপরতা এবং মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সবই মিলিয়ে ঈদের আগে কাটিহার বাজার হয়ে উঠেছে এক বিশাল ক্যানভাস যেখানে আঁকা হচ্ছে বাংলাদেশি জীবনের বাস্তবতা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
এই কাটিহার বাজার আজ শুধু কুরবানির বাজার নয় এটি একটি গল্প একটি অনুভব একটি জীবন্ত বাংলাদেশ।
