ফিলিপাইন ভিত্তিক ‘বাংলাউইন’ অনলাইন জুয়ার এজেন্ট গ্রেফতার ১

মোঃ ইদ্রিস আলী,
ক্রাইম রিপোর্টার,

ঝিনাইদহে ধরা পড়লো বড় চক্রের স্থানীয় সংগঠক
জুয়াপর্যবেক্ষণে মাঠে ডিবি –দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডিজিটাল অনলাইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক জুয়া চক্রের বাংলাদেশের অন্যতম একজন এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে ঝিনাইদহ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল। রোববার রাতে সদর উপজেলার মুরারীদহ গ্রামে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় মেহেদি হাসান নামের ওই ব্যক্তিকে।
গ্রেফতারকৃত মেহেদির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন, যা তিনি অনলাইন জুয়ার যাবতীয় কার্যক্রমে ব্যবহার করতেন।
‘বাংলাউইন’ সাইটের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও আসক্তির ফাঁদ
পুলিশ জানিয়েছে, মেহেদি হাসান ফিলিপাইন থেকে পরিচালিত ‘বাংলাউইন’ নামের একটি অনলাইন জুয়া সাইটের বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন। এই সাইটের মাধ্যমে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন এজেন্ট নিয়োগ, মোবাইল ব্যাংকিং ও অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট মাধ্যমের সাহায্যে অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা করতেন।
বিনোদনের মোড়কে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লুকিয়ে থাকা এই অনলাইন জুয়াগুলো তরুণ সমাজের জন্য ভয়াবহ এক আসক্তির ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এসব সাইটে প্রবেশকে আরও সহজ করে তুলেছে।
চক্রটি কীভাবে কাজ করত
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, মেহেদির কাজ ছিল নতুন ব্যবহারকারী সংগ্রহ করা, তাদের কাছে জুয়ার নিয়ম ও খেলার ধরন তুলে ধরা এবং অর্থ জমা দিয়ে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় সেই প্রলোভন দেখানো। যারা জুয়ার প্রতি আগ্রহ দেখাত, তাদের জন্য গোপন লিংক সরবরাহ করত এবং অর্থ জমা নেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে ভার্চুয়াল টেবিলে খেলতে দিত। এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের পথ সুগম হতো।
এজেন্ট কমিশন ভিত্তিতে আয় করত, ফলে তার উৎসাহ আরও বেশি ছিল মানুষকে এই খেলায় যুক্ত করার।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মন্তব্য
ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এটা শুধু একজনকে গ্রেফতারের ঘটনা নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু মাত্র। আমরা তদন্ত করে দেখছি এই চক্রের সঙ্গে দেশি-বিদেশি কারা কারা জড়িত।”
তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমগুলো নজরে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ও টেলিকম কোম্পানিকেও তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি
সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অনলাইন জুয়া কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, গোটা সমাজে একটি বিকৃত প্রতিযোগিতা, দ্রুত ধনী হওয়ার বাসনা ও অপরাধপ্রবণতা সৃষ্টি করে। তরুণরা লেখাপড়া ছেড়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বিপথগামী হচ্ছে।
তাছাড়া বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এই চক্রগুলো।
সর্বশেষ,
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলাও এখন সময়ের দাবি। ঝিনাইদহে অনলাইন জুয়ার এজেন্ট গ্রেফতারের ঘটনা এটিই জানান দেয় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। তবে কেবল আইন প্রয়োগই নয়, এই বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল হতে হবে, যেন তরুণরা এমন ক্ষতিকর অনলাইন কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *