ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে জমজমাট জাদুরানি কুরবানির হাট, সাধ্যের মধ্যে গরু ছাগল

হরিপুর উপজেলা প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার জাদুরানি বাজারে জমে উঠেছে কুরবানির পশুর হাট। ঈদুল আজহা সামনে রেখে হাটে দেখা যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক গরু ও ছাগলের সমাগম। সকাল থেকেই চারদিক থেকে দলে দলে লোকজন আসছেন হাটে। কেউ গরু ছাগল কিনতে আসছেন কেউবা বিক্রি করতে। পুরো বাজারে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। গরুর ডাক ছাগলের কিচিরমিচির মানুষের হাঁকডাক দরদাম সব মিলিয়ে জমজমাট দৃশ্য।

বাজারে দেশীয় নানা জাতের গরু পাওয়া যাচ্ছে। কালো সাদা বাদামী ছোপ ছোপ রঙের গরু যেগুলো সকলেই কুরবানির জন্য উপযুক্ত এবং সুস্থ। পাশাপাশি আছে নানা আকারের ছাগল ছোট বড় সব ধরনের। অনেক বিক্রেতাই গরু সাজিয়ে এনেছেন গায়ে মালা রঙিন কাপড় এমনকি কিছু পশুর গায়ে চুন দিয়ে আকর্ষণীয় ডিজাইন করা হয়েছে। এসব দেখে বোঝা যায় তারা কুরবানির হাটকে ঘিরে কতটা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন।

ক্রেতারা জানাচ্ছেন অন্যান্য হাটের তুলনায় জাদুরানি বাজারে পশুর দাম তুলনামূলক কম এবং অনেকটাই সাধ্যের মধ্যে। অনেকেই বলছেন তারা এখানে এসে ভালো গরু কম দামে পেয়েছেন। হাটে কথা হয় রহিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন আমি এক লাখ টাকায় খুব ভালো একটা গরু কিনেছি যেটা অন্য হাটে গেলে এক লাখ বিশ হাজার চাইলেও অবাক হতাম না।
একইভাবে ছাগল কিনে খুশি শাহিদা বেগম বলেন ছাগলের দাম অনেকটা আমার সাধ্যের মধ্যেই। আমি এই হাটে আসতেই চাই কারণ এখানকার দামের মধ্যে বিশ্বাস আছে।

হাটে প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বাজারের একপাশে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রোডে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ সদস্যরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।
এছাড়া পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রাণিসম্পদ অফিসের একটি অস্থায়ী চিকিৎসা বুথ বসানো হয়েছে। সেখানে গরু ছাগলের শরীর পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে তারা কুরবানির উপযোগী কি না অসুস্থ পশু শনাক্ত করে আলাদা রাখা হচ্ছে।

এক পশু চিকিৎসক জানান বাজারে আসা অধিকাংশ গরু ছাগলের স্বাস্থ্য ভালো। তবে কিছু গরু হাটে আসার পথে দুর্বল হয়ে যায় তাদেরকে ইনজেকশন ও খাবার দিয়ে সুস্থ রাখা হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তি কাজ করছে কারণ তারা নিশ্চিত হচ্ছেন তারা সুস্থ পশুই কিনছেন।

বাজারের বিভিন্ন জায়গায় চা দোকান পান দোকান ভাজা পোড়ার অস্থায়ী দোকানও বসেছে। অনেকেই গরু দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে এক কাপ চায়ে মুখ ভিজাচ্ছেন। কিছু দোকানে শিশুদের খেলনা মুখোশ বাঁশিও বিক্রি হচ্ছে। এক কথায় হাটটি এখন শুধুমাত্র কেনাবেচার জায়গা নয় বরং একটি উৎসবের মিলনমেলা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা হাট ব্যবস্থাপনা তদারকি করছেন নিয়মিত। পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় রাখা হয়েছে কেরোসিন ও ব্লিচিং পানির ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট স্থানে পশুর মলমূত্র ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিক্রেতাদের মুখেও হাসি। তারা বলছেন এই হাটে পশু বিক্রি করতে পেরে তারা ভালো দাম পাচ্ছেন এবং ক্রেতারাও দাম নিয়ে তেমন অভিযোগ করছেন না। এতে করে দুই পক্ষই খুশি। অনেকেই বলছেন গত বছরের তুলনায় এবার পশুর সরবরাহ বেশি এবং বাজারের পরিবেশও অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপদ।

এই হাট এখন কেবল পশু কেনাবেচার কেন্দ্র নয় বরং একটি উৎসবের আবহে পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন ঈদের আর মাত্র এক দুইদিন বাকি। তাই আজ থেকেই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে ভিড় বেড়েছে বহুগুণ।
অনেকেই বলছেন আজই কিনে ফেলছি কাল আর বাজারে ঠাঁই মিলবে না
এমন এক তাড়া আর চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পুরো হাটজুড়ে। এ যেন শুধু গরু ছাগলের বেচাকেনা নয় বরং ঈদের আনন্দেরই আরেক রূপ।

এই চিত্র দেখলেই বোঝা যায় কুরবানির পশুর হাট কেবল একটি লেনদেনের স্থান নয় এটি হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনের অংশ। জাদুরানি বাজার এখন শুধু একটি হাট নয় বরং একটি উৎসবমঞ্চ যেখানে গরু ছাগলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের আশা বিশ্বাস ও ভালোবাসার গল্প।

মো মিলন খান
হরিপুর উপজেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
০১৮৩০৩০৩১৩১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *