আল্লাহর মেহমানদের জন্য আজ এক মহিমান্বিত দিনঃ আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের লাখো মুসলিম

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার- জাহারুল ইসলাম জীবন।

পবিত্র জিলহজ মাসের মূল আনুষ্ঠানিকতায় আজ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান আজ মক্কার অদূরে অবস্থিত আরাফাতের সুবিশাল ময়দানে সমবেত হয়েছেন। “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” ধ্বনিতে মুখরিত এই ময়দান পরিণত হয়েছে এক জান্নাতি পরিবেশে, যেখানে আল্লাহর মেহমানরা নিজেদের গুনাহ মাফ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ব্যাকুল হৃদয়ে প্রার্থনা করছেন।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে আরাফাত দিবসের তাৎপর্যঃ-
আরাফাত দিবস হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন বা স্তম্ভ। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল-হাজ্জু আরাফাহ” অর্থাৎ “হজ মানেই আরাফাহ”। (তিরমিজি) এর অর্থ হলো, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল ভিত্তি। যে ব্যক্তি আরাফাতে অবস্থান করতে পারল না, তার হজ পূর্ণ হবে না।
** ১. গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ সুযোগঃ
আরাফাত দিবসকে গুনাহ মাফের এক অসাধারণ সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আরাফাতের দিনের চেয়ে উত্তম এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা’আলা বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।” (সহীহ মুসলিম) এই দিনে আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের খুব কাছে চলে আসেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। যারা এই দিনে আরাফাতে অবস্থান করেন, তাদের জন্য আল্লাহ তা’আলা বিশেষ রহমত ও বরকতের দরজা খুলে দেন।
** ২. দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্তঃ
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা অনেক বেশি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সর্বোত্তম দোয়া হলো আরাফাতের দিনের দোয়া।” (তিরমিজি) এই দিনে বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ্ তাহা কবুল করেন। তাই বিশ্বের লাখো হাজী সাহেব আজ দু’হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাচ্ছেন, নিজেদের এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করছেন।
** ৩. ইসলামের পূর্ণতা লাভের দিনঃ
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াতে বলেছেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” এই আয়াতটি বিদায় হজের সময় আরাফাতের ময়দানেই নাযিল হয়েছিল। এটি ইসলামের পূর্ণতা লাভের ঘোষণা এবং এই দ্বীনের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ।
** ৪. উম্মাহর ঐক্যের প্রতীকঃ
আরাফাতের ময়দান মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির এক অনন্য প্রতীক। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণের মানুষ আজ একই পোশাকে, একই উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছেন। এটি প্রমাণ করে যে, মুসলিমরা জাতি, বর্ণ, ভাষার ভেদাভেদ ভুলে একই আল্লাহর ইবাদত করে এবং একই দ্বীনের অনুসারী।
আরাফাতের ময়দানে হাজী সাহেবদের কার্যক্রমঃ
আজ সূর্যোদয়ের পর থেকে হাজী সাহেবরা মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা হয়েছেন। জোহরের ওয়াক্তের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন। এই সময় তারা কসরের সাথে জোহর ও আসরের নামাজ একসাথে আদায় করবেন। এরপর তারা তাসবীহ-তাহলিল, জিকির-আজকার, তওবা-ইস্তেগফার এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করার মাধ্যমে নিজেদের সময় অতিবাহিত করবেন। সূর্যাস্তের সাথে সাথে তারা মুজদালিফার দিকে রওনা হবেন এবং সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে আদায় করবেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিমদের করণীয়ঃ
আরাফাত দিবসের ফজিলত শুধু আরাফাতে অবস্থানকারী হাজী সাহেবদের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়। যারা হজে যেতে পারেননি, তারাও এই দিনের বরকত লাভ করতে পারেন। এই দিনে নফল রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আরাফাতের দিনের রোজা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা।” (সহীহ মুসলিম) এছাড়া, বেশি বেশি ইস্তেগফার করা, তওবা করা, নফল নামাজ আদায় করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করার মাধ্যমে এই দিনের বরকত অর্জন করা সম্ভব।
আরাফাত দিবসের এই মহিমান্বিত দিনে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন সকল হাজী সাহেবদের হজ কবুল করেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। আমরা আরও দোয়া করি, আল্লাহ যেন সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন এবং তাদের সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন- আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *