ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডি ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার: বে-আইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ

গাইবান্ধা সাঘাটা প্রতিনিধি:

বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সাঘাটার বিভিন্ন প্রান্তে কিছু ব্যক্তি ফেসবুকে নিজেদের ব্যক্তিগত আইডি ব্যবহার করে নিয়মিতভাবে সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। এসব ব্যক্তিরা নিজেদের “উপজেলা প্রতিনিধি” বা “জেলা প্রতিনিধি” পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশ করে থাকে। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষত ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডির মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন সম্পূর্ণ বেআইনি ও নীতিবহির্ভূত।

তারা যে ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে থাকে তা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক যাচাই-বাছাই হয় না। ফলে এতে সংবাদ পরিবেশনের ন্যূনতম পেশাগত শুদ্ধতা থাকে না এবং সত্যতার ঝুঁকি থেকেই যায়।

এ বিষয়ে কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদকের সাথে কথা হলে জানান, ফেসবুক কোনো গণমাধ্যম নয় এবং সেখানে কোনো ব্যক্তি নিজের ইচ্ছেমতো সংবাদ প্রকাশ করতে পারেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে একজন ব্যক্তি একইসাথে সংবাদ সংগ্রাহক, সম্পাদক ও প্রকাশকের ভূমিকায় থাকেন, যা সংবাদ পরিবেশনের মূলনীতির চরম লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে একাধিক আইনজীবীর সাথে কথা হলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন, এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিচের ধারাগুলোর আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:
(ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮)
ধারা ২৪: পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ
ধারা ২৫: মিথ্যা বা ভীতিকর তথ্য প্রচার
ধারা ২৬: অনুমতি ছাড়া তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার
ধারা ২৯: মানহানিকর তথ্য প্রচার

এ বিষয়ে বিশিষ্ট কয়েকজন সিনিয়র পেশাদার সংবাদকর্মী জানান, তারা এমনটি করছে কয়েকটি কারণে –
প্রথমত, সহজ প্ল্যাটফর্ম: সংবাদপত্রে কোনো সংবাদ প্রকাশের আগে একাধিক স্তর পার করে তা যাচাই করা হয়। কিন্তু ফেসবুকে কোনো নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো লেখা যায়।

দ্বিতীয়ত, পত্রিকায় প্রতিনিধি বাতিল করা: অনেকেই পূর্বে কোনো পত্রিকায় প্রতিনিধি ছিলেন কিন্তু বর্তমানে সে পদে নেই। তারা সাংবাদিক পরিচয় ধরে রাখতে সামাজিক মাধ্যমে এ ধরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, সংবাদকর্মীরা চাইলে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ম মেনে এসব মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন। এতে বাধা থাকবার কথা নয়।

ফেসবুক ভিত্তিক বেনামি এই সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সমাজে ভুল তথ্য ছড়ানো, ব্যক্তির সম্মানহানি এবং আইন লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বেড়ে চলেছে। এটি এখন ওপেন সিক্রেট যে, এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই প্রকৃত সাংবাদিক নন বরং সুবিধাভোগী শ্রেণির এক ধরনের ধান্দাবাজ। পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তাদের একটি দাবি- “চেনা বামনের পৈতা লাগে না।”

এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সচেতনতা এবং ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে সচেতন নাগরিকদের ভূমিকা একান্ত জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *