ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান সহ, দুই শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহতঃ মধ্যপ্রাচ্যে তাৎক্ষণিক চরম উত্তেজনা

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার- জাহারুল ইসলাম জীবন।

শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫ তারিখে ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের রাজধানী তেহরান এবং এর আশেপাশের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে চালানো একাধিক বিমান হামলায় ইরানের অভিজাত রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি এবং দুই শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের ওপর ব্যাপক হামলা শুরু করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
হামলার বিস্তারিত বিবরণঃ-
রাতের আঁধারে চালানো এই হামলায় ইসরায়েল বিশেষত ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর সদর দপ্তরকে লক্ষ্যবস্তু করে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে জেনারেল হোসেইন সালামির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তিনি ২০১৯ সাল থেকে বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং ইরানের পরমাণু ও সামরিক কৌশল নির্ধারণে ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার নেতৃত্বেই ইরান ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে একাধিক সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রেখেছিল।
তেহরানসহ ইরানের কয়েকটি জায়গায় ইসরায়েলি হামলায় দুই জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন হলেন ফেরেয়দুন আব্বাসি, যিনি ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (এইওআই)-এর সাবেক প্রধান ছিলেন। ২০১০ সালে একবার হত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া আব্বাসি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর দায়িত্বে ছিলেন। নিহত অপর বিজ্ঞানীর নাম মোহাম্মদ মেহেদী তেহরানচি, যিনি তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে তারা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালিয়েছে এবং তেহরানসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং ইরানকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন। ইসরায়েলে ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং দেশটি দ্রুতই পাল্টা হামলার আশঙ্কা করছে।
ইরানের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও হুঁশিয়ারিঃ-
জেনারেল হোসেইন সালামির মৃত্যু এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে, ইসরায়েল এই হামলার মাধ্যমে তার করুণ পরিণতি ডেকে নিয়ে এসেছে। ইরানের সেনাবাহিনী এবং রেভল্যুশনারি গার্ডস এরই মধ্যে সালামির মৃত্যু নিশ্চিত করে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে।
বিশ্লেষণাত্মক প্রেক্ষাপটে্ ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস মূলত একটি সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি যা দেশটির ইসলামি শাসন ব্যবস্থার প্রতি ভেতর ও বাইরে থেকে আসা যেকোনো হুমকিকে প্রতিরোধে কাজ করে। বিবিসি জানিয়েছে, আইআরজিসি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর একটি শক্তিশালী শাখা, যার রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব দেশটির ভেতরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গার্ডস বাহিনী বিশেষত ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই হামলার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে এমনিতেই বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া বিশ্বজুড়ে তাৎক্ষণিক আবারো নানামূর্খী উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর অগ্নিগর্ভের জন্ম দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *