আলিকদম ও লামায় বৌদ্ধ বিহারে জমি দখল করে কটেজ নির্মাণ

মোহাম্মদ আকাশ বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি

বান্দরবানের আলিকদম ও লামা উপজেলা সীমান্তবর্তী ২৮৫ নং সাঙ্গু মৌজায় মারাইংতং জাদী এলাকায় বৌদ্ধ বিহারের জমি দখল করে বহিরাগত লোকজন কর্তৃক কটেজ নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লামার সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত ম্রো কর্তৃক অবৈধ উক্ত জায়গাটি বহিরাগত রিসোর্ট মালিকের নিকট লিজ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

রংরাং ইকো রিসোর্ট ও বহিরাগত বাঙালির সাথে লামা উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি ও গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মারমার ছেলে উ থোয়াইহ্লা মারমার মাধ্যমে ৫০ লক্ষ টাকার চুক্তি মূল্যে হেডম্যান কর্তৃক মারাইংতং জাদী পাহাড়ের চূড়ায় জমি লিজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লামা উপজেলার ২৮৫ নং সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত ম্রো কর্তৃক মারাইংতং পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠী ম্রোদের কে জুম চাষ না করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এইসব এলাকায় লাংরুই কারবারি পাড়া, মাংক্রাই কারবারী পাড়া, নতুন ম্রো পাড়া, রোয়াজা কারবারি পাড়ার লোকজন দীর্ঘদিন এ মৌজার প্রজা হিসেবে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে জানান।

সূত্র আরও জানান, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগের দোসর গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে উ থোয়াইহ্লা মারমা, সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত ম্রো ও অক্সি মামুন নামের জনৈক বাঙালি মিলে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীকে জুম চাষ না করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। তারা ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হেডম্যান থেকে একশত বছরের চুক্তি মূল্য কিনে নিয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর কাছে।

রোয়াজা পাড়ার লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, লামা উপজেলার ২৮৫ নং সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে সরকারি সেগুন বাগান বিক্রি করেন। তারা আরও বলেন, “চংপাত ম্রো হেডম্যান আমদেরকে খাওয়ার পানি ব্যবস্থা করে দিবে বলে নগদ ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নেওয়ার পরও এখনো খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করেননি।”

গ্রামবাসীরা আরও বলেন, “চংপাত ম্রো হেডম্যানের পিতার আমলে আমরা অনেক শান্তিতে থাকলেও বর্তমানে তার অত্যাচারে আমরা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছি। চংপা ম্রো হেডম্যান আমাদের সীজনকৃত কলা বাগান, আম বাগান কেড়ে নিয়ে বহিরাগত লোকজনের বিক্রি করে দিয়েছেন ইতিমধ্যে।”

তথ্য সূত্রে আরও জানা যায়, গত ১ থেকে ২ মাস ধরে সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত ম্রো মাইরাংতং জাদী বৌদ্ধ বিহারের জমি দখল করে বাঙালিদের সহযোগিতায় পাহাড়ের চূড়ায় অবৈধভাবে কটেজ ও রিসোর্ট নির্মাণ করেন যা ইতিমধ্যে তিনি কক্সবাজারের ইনানী রিসোর্ট মালিকের কাছে ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১০ একর পাহাড় (জমি) লিজ প্রদান করেন। বহিরাগত বাংগালীসহ মিলে রংরাং ইকো রিসোর্ট নাম দিয়ে তড়িগড়ি করে ৩ টি জুম ঘর রিসোর্ট নির্মাণ করেন। সেগুলো স্হানীয় ম্রো, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যাঁ জনগোষ্ঠীরা মিলে ভেঙ্গে দিয়েছে বলে জানা যায়।

এছাড়াও তিনি কক্সবাজার টুরিস্ট জুন, সাজেক ভ্যালী, গ্রিন ভ্যালীর মালিকসহ অসংখ্য বহিরাগত লোকজনের কাছে পাহাড়ের জমি বিক্রি করেন বলে জানা গেছে।

গোপন সংবাদের ভিত্তি আরও জানা যায় যে, বান্দরবানের বোমাং রাজা, হেডম্যান কার্বারী এসোসিয়েশন, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রোসহ অসংখ্য ব্যক্তি সাঙ্গু মৌজা এলাকায় মারাইংতং জাদী পাহাড়ে রিসোর্ট ও কটেজ নির্মাণে নিষেধ করা সত্ত্বেও অব্যাহতভাবে নির্মাণ কার্যক্রম চলছে বলে জানা যায়।

এই বিষয়ে জানতে ২৮৫ নং সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপা ম্রোর কাছে একাধিক বার কল দেওয়ার পরও তিনি কল রিসিভ করেন নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *