পাকুন্দিয়ায় পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কর্ম ব্যস্ত সময় কাটাছেন কামাররা


আবু হানিফ পাকুন্দিয়া প্রতিনিধি

আসছে আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার কামাররা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে তাদের কর্মব্যস্ততা।  কোরবানির পশু জবাই ও গোশত প্রস্তুতে প্রয়োজন হয় দা, বটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়ালসহ নানা ধাতব হাতিয়ার—যার প্রস্তুতিই এখন চলছে পুরোদমে।
পাকুন্দিয়া উপজেলার পুলেরঘাট উপশহর, কোদালিয়া, আশুতিয়া, মির্জাপুর, বাহাদিয়া, মঠখোলা ও নারান্দী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কামারপাড়াগুলো এখন কর্মচাঞ্চল্যে মুখর। দিন-রাত চলছে দা, বটি, ছুরি তৈরির কাজ। লাল আগুনে পুড়িয়ে লোহা পিটিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব অস্ত্র। টুংটাং শব্দে মুখরিত কামারপাড়াগুলো যেন এক আনন্দ ছন্দে মেতে উঠেছে।
রাণীর বাজার কামারপাড়া, যা ভৈরব অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ কামারপাড়া হিসেবে পরিচিত, সেখানে নতুন নতুন দা, ছুরি ও বটি তৈরি হচ্ছে। কেউ আবার পুরনো দা, ছুরি ও বটি ঝালাই করিয়ে ধারালো করছেন। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য এসব অস্ত্র অত্যাবশ্যকীয় হওয়ায় কামারদের দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
পাকুন্দিয়া বাজারে মতি মিয়া জানান , কোরবানির দিন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যেতে হয়। কেউ হাপর টানছেন, কেউ কয়লা জোগান দিচ্ছেন, কেউবা তপ্ত লোহা পিটিয়ে তৈরি করছেন দা-বটি। কামারদের ভাষায়, “এটাই আমাদের কামাইয়ের মৌসুম।”
কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সরঞ্জামের দামও কিছুটা বেড়েছে। পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ২০০–৩০০ টাকা, দা ২০০–৩৫০ টাকা, বটি ২৫০–৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০–১ হাজার টাকা এবং চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০–২ হাজার টাকায়। ছুরি শান দেওয়ার কাজের দাম নির্ভর করছে গুণগত মানের ওপর—শুরু হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে, যা ১৫০ টাকায় গড়াচ্ছে।
ক্রেতাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম কিছুটা বেশি রাখা হচ্ছে। তবে কামাররা বলছেন, “সারা বছর আমাদের তেমন কাজ থাকে না, মূল আয় হয় এই ঈদ মৌসুমেই। এছাড়া কয়লার দামও অনেক বেড়ে গেছে, তাই কিছুটা বাড়তি দাম রাখতেই হয়।”
অনেকে জানিয়েছেন, নতুন করে আর অর্ডার নেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, বাইরের অঞ্চলের অর্ডারও রয়েছে। এবার ঈদের আগে কাজের চাপ আরও বেশি, কারণ অতীতে লকডাউনের সময় দোকান বন্ধ ছিল, সেসব অর্ডারও এবার মেটাতে হচ্ছে।
কামারদের মতে, ঈদ এলে লোহার দাম না বাড়লেও কয়লার দাম বেড়ে যায়—যা তাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। তবুও ঈদুল আজহা সামনে রেখে কামারশিল্পে ফিরেছে প্রাণ, আর কামাররা পার করছেন বছরের সবচেয়ে কর্মব্যস্ত সময়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *